টাকার জন্য চিকিৎসা হচ্ছে না ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মুবিনের
ডামুড্যা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২১ পিএম
বৈষম্যবিরোধী একদফা ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত কিশোর মুবিন নামে এক কম্পিউটার অপারেটরের অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। যার কারণে তার চোখ দুটো হারাতেও হতে পারে। মুবিনকে নিয়ে পরিবারের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
ভুক্তভোগী কিশোর মুবিন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বড় শিধলকুড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে।
শুক্রবার সকাল ১০টার সময় সরেজমিনেমুবিনদের বাড়িতে গিয়ে মুবিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিশোর মুবিন প্রতিদিনের মতো গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে কাজের জন্য দোকানে যায়। দোকানে ঢোকার কিছু সময় পরেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিল বের হয়। তখন মুবিন দোকান বন্ধ করে ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি উত্তরা থানার সামনে গেলে থানা থেকে মিছিলটি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ।
পুলিশের ছোড়া একটি বুলেট তার বাম চোখের উপরের দিক দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন সে মাটিতে পড়ে যায়। কয়েকজন আন্দোলনকারী তার গায়ে থাকা গেঞ্জি খুলে মাথা বেঁধে প্রথমে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে বেশ কয়েক দিন চিকিৎসা শেষে চোখের অপারেশন করাতে ভিশন আই হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ওর বেশকয়েকটি অপারেশন হয়।
মুবিনের মা নাজমা বেগম জানান, ভিশন আই হাসপাতালে আমাদের এক লাখ বিশ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এখন আমাদের কাছে ওর চিকিৎসার জন্য কোনো টাকা নেই। শুধু বাবার রেখে যাওয়া টিনের ঘর ও একটু জমি শেষ সম্বল। এটা বিক্রি করে দিলে আমার তিনটি সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া উপায় নেই। এখন সরকার ও দেশবাসী যদি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সহায়তা করে, তাহলে আমাদের অনেক উপকার হয়।
তিনি বলেন, আমার স্বামী নেই, আমার ৩টি সন্তান। বড় ছেলেটি প্রতিবন্ধী, মুবিন ও আরেক ছেলে ঢাকাতে কাজ করত ওরা দুই ভাইয়ের বেতনের টাকা দিয়েই আমাদের পুরো সংসার চলত। এখন চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমার ছেলের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে আমি আবেদন জানাই আমার ছেলেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিন।
অসহায় কিশোর মুবিন বলেন, আমি অন্যান্য সবার মতো সুস্থ ছিলাম, কিন্তু ১৮ জুলাইর পর আজ পর্যন্ত আমি চোখে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখি না। দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে তাও দেখতে পারছি না, মানুষের কাছ থেকে শুনেই যাচ্ছি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সরকার চিকিৎসা করাবে কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমার কেউ খোঁজ নিল না।
মুবিন ছাত্র সমন্বয়ক দুজন উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের ডাকে আন্দোলনকারী যারা আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের দায়-দায়িত্ব নিন। মুবিন ক্রন্দনরত কন্ঠে বলেন, আমার মাথায় এখনো গুলি আছে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না, ঘুমাতে গেলে অসহ্য যন্ত্রণা করে।
প্রতিবেশী নূরুল ইসলাম সরদার বলেন, কিছু দিন আগে মুবিনের বাবা মারা যায়। এখন ও আন্দোলনে গিয়ে দুই চোখ হারায়। ওদের জায়গা জমি বলতে ঘর ছাড়া আর কিছু নেই। সরকার যদি এ পরিবারকে একটু সহায়তা করে তাহলে ওরা বেঁচে থাকতে পারবে।
মুবিনের মামা নূর মোহাম্মদ হাওলাদার বলেন, অল্প কিছু দিন আগে ওর বাবা মারা যায়। একটা প্রতিবন্ধী ছেলেসহ তিন সন্তান নিয়ে কোনোরকম সংসার চলছিল। হঠাৎ করে ওর ছোট ছেলে মুবিন আহত হয়ে প্রতিবন্ধী অবস্থায় পড়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, মেজো ভাগিনা একটা বেসরকারি কোম্পানিতে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে স্ত্রী ও মা ভাইদের নিয়ে চলতে কষ্ট হয়। আমরাও গরিব মানুষ ওদের যে একটু সহায়তা করব তাও পারি না। সরকার যদি দয়া করে আমার ভাগিনাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে তাহলে আমার বোনটা একটু ভালো থাকতে পারবে।