৫ বছর পর্যটনমন্ত্রী পেয়েও উন্নয়ন ছোঁয়া পড়েনি চুনারুঘাটে
আবুল কালাম আজাদ, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ)
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
প্রকৃতির আপন মহিমায় নানা রুপে সৃজিত হবিগঞ্জের চুনারুঘাট। বিল হাওড়, পাহাড়-বন চা বাগান অরণ্যে ঘেরা এই উপজেলাকে প্রকৃতি সাজিয়েছে অকৃপণভাবে। এখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, সবুজ চা বাগানে গালিছা বিছানো উঁচু-নিচু টিলা আর মনোরম রাবার বাগান। রয়েছে খাসিয়া, টিপরা এবং মণিপুরী আদিবাসী সম্প্রদায়ের বৈচিত্রময় জীবনধারার সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ।
ভ্রমণপিপাসুদের আকৃষ্ট করার মত এত সব দর্শনীয় স্থান থাকার পরেও উপজেলার পর্যটনের উন্নয়নে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। বিগত ৫ বছর চুনারুঘাট মাধবপুরে পর্যটনমন্ত্রী থাকার পরও হয়নি ছিটেফুটো কোনো উন্নয়ন।
অথচ চুনারুঘাটবাসী আসায় বুক বেধেছিল পর্যটনমন্ত্রীর মাধ্যমে রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও সাতছড়ির উন্নয়নের দুয়াল খুলবে। কিন্তু সাতছড়ির একটি গেইট ছাড়া উপজেলায় আর কোনো কিছুই করা হয়নি।
জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এই উদ্যানে রয়েছে প্রায় ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু। রয়েছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি এবং সমপরিমাণ গাছপালা। বিলুপ্তপ্রায় পাখি, জীবজন্তু আর গাছপালার সমারোহ এই উদ্যানে। উদ্যানের অভ্যন্তরে টিপরাপাড়ায় একটি পাহাড়ি আদিবাসীর ২৪টি পরিবার বসবাস করে। উদ্যানের কাছাকাছি আছে ৯টি চা বাগান। এই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রতি বছর সমাগম ঘটে কয়েক লাখ দর্শনার্থীর।
কিন্তু উদ্যানের কাছাকাছি রাত কাটানোর মত কোনো হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট না থাকায় দূর-দুরান্তের পর্যটকদের পড়তে হয় বিপাকে। ফলে এই উদ্যানটিও কাঙ্ক্ষিত পর্যটক টানতে পারছে না।
উপজেলায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। আয়তনের দিক থেকে সুন্দরবনের পর দেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনভূমি এটি। এর আয়তন ১৭৯৫ দশমিক ৫৪ হেক্টর। এই বনে প্রায় ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং সাত প্রজাতির উভচর রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা। চুনারুঘাট শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ধরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সীমান্তঘেঁষা এই বনে যেতে হলে প্রায় ৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এ কারণে একমাত্র মোটরসাইকেল ছাড়া বনের ভেতরে যাতায়াত সম্ভব নয়। বৃষ্টি হলে মোটরসাইকেল দিয়েও যাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। শুধুমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ হবে এ বনাঞ্চলটি।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি শামছুন্নাহার চৌধুরী বলেন, ‘সাতছড়ি এবং রেমা কালেঙ্গাকে ঘিরে বড় ধরনের পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। কিন্তু শুধু উদ্যোগ এবং প্রচারের অভাবে সেটিকে আমরা তুলে ধরতে পারছি না। গড়ে উঠেনি কোনো হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে যে আইনি জটিলতা রয়েছে তা সরকারি উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়। সরকার উদ্যোগ নিলে বেসরকারি পর্যায়েও অনেক উদ্যোক্তা এগিয়ে আসবেন।’
প্রবীণ সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী নুরুল আমিন বলেন,আমরা বিগত ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পর্যটন মন্ত্রী পেয়েছিলাম। কিন্তু পর্যটনের ছিটাফুটা কাজও তিনি করেননি। অথচ চুনারুঘাটে রয়েছে রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও সাতছড়ির মতো জাতীয় উদ্যান। তিনি বলেন, ‘এসব দর্শনীয় স্থানে থাকা খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, পর্যটক আসবে কেন?
এছাড়া চুনারুঘাটে খাসিয়া, টিপরা এবং মণিপুরী আদিবাসী সম্প্রদায়ের গ্রাম রয়েছে। এই আদিবাসীদের গ্রামগুলোকে ঘিরে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যবসায়ী নেতা সাজিদ আহমেদ মনে করেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা দর্শনীয় স্থানগুলোকে ঢেলে সাজালে শুধু দেশি নয়, বিদেশি পর্যটকের চোখ আটকাবে এ জেলায়। এই পর্যটনকে ঘিরে প্রতি বছর অন্তত কোটি টাকার ব্যবসা সম্ভব। এতে কর্মসংস্থান হবে কয়েক হাজার মানুষের। ‘অনেকেই উপজেলায় পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু পর্যটনের অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকে বিনিয়োগ করতে ভয় পান।’
তিনি বলেন, আমাদের সাবেক মন্ত্রী পর্যটনের দায়িত্ব পেয়েও চুনারুঘাট মাধবপুরের টপর্যটনের উন্নয়নে কোনো কাজ করেননি। সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন চুনারুঘাটের পর্যটনের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু সরকার পরিবর্তনে তিনি ব্যর্থ হলেন।