শাজাহানপুরে সাগর ও স্বপন হত্যায় মামলা, আসামি ২৯
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পিএম
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সাগর তালুকদার ও তার বাহিনীর সদস্য স্বপন আলী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অবশেষে মামলা হয়েছে। সাগরের বোন রোকসানা হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর বুধবার রাতে শাজাহানপুর থানায় এ মামলা করেন।
এজাহারে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এবং আশেকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলীসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি থমথমে ও প্রতিপক্ষের লোকজন গ্রাম ছেড়েছেন।
এছাড়া নিহত সাগরের অপর সঙ্গী কব্জি হারানো মুক্তার হোসেনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আসামিদের স্বজনরা জানান, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে হযরত চেয়ারম্যান এলাকাছাড়া। এই জোড়া খুনের মামলায় শত্রুতাবশত অনেককে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাগর, স্বপন ও মুক্তার পুকুর থেকে সাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া গ্রামে আসেন। এ সময় সেখানে একদল দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সাগর ও স্বপনকে হত্যা করা হয়। এ সময় মুক্তারের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তিনি আত্মগোপন করেন।
হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে সাগরের লোকজন আবদুল গফুর নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাঙচুর করে। সাগর ও স্বপন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তার লোকজনের হামলার ভয়ে অনেকে গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। সাবরুল মন্ডলপাড়া ও সাবরুল বাজারের পরিস্থিতি এখন থমথমে।
এদিকে জোড়া খুনের ব্যাপারে গ্রামবাসীরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকদের ধারণা, সাগর বাহিনীর নির্যাতনের শিকার প্রতিপক্ষ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
তারা দাবি করেন, সাগর ও স্বপনের মৃত্যুতে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে শাজাহানপুর থানার নবাগত ওসি ওয়াদুদ আলম জানান, হত্যার কারণ আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি ও ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে ২৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। নিখোঁজ মুক্তারের সন্ধান মেলেনি। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তদন্তসাপেক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত সাগর তালুকদার বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়ার গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে। তার সঙ্গী স্বপন আলী একই এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে ও আহত অবস্থায় পলাতক মুক্তার হোসেন প্রতিবেশী আনসার আলীর ছেলে।
সাগর এক সময় বাসের হেলপারি করতেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার হাত ধরে রাজনীতিতে নাম লেখান। ১৫-২০ জন সদস্য নিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন; যা সাগর বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে মাদক ব্যবসা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ করেন। তার নামে বিভিন্ন থানায় তিনটি হত্যাসহ ১৭টি মামলা রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে জেলে বসে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও শিক্ষক শাহজালাল তালুকদার পারভেজকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। সাগর ও তার বাহিনীর সদস্যরা বগুড়ার শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার সীমান্তবর্তী অন্তত ৩০ গ্রামে সন্ত্রাস চালিয়ে আসছিলেন। তাদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। সাবরুল বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মামা-ভাগ্নে এন্টারপ্রাইজ তার সন্ত্রাসের আখড়া ছিল।
তিনি সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এলাকায় ফিরে আগের মতো তার অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে যান। সাবরুলের হরিদেবপুর নামে এক বড় জলাশয় দখলে নিয়ে সাগর, স্বপন ও মুক্তার মাছ চাষ করেন।
সাগর তালুকদারের বাবা গোলাম মোস্তফা তালুকদার মাদক ব্যবসায়ী। বাবার কাছেই সাগরের মাদক ব্যবসার হাতেখড়ি। রাজনৈতিক ও পরিবারের প্রশ্রয় পেয়েই সাগর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।