Logo
Logo
×

সারাদেশ

পাহাড়ে লেগেছে সোনালি রং

Icon

আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ পিএম

পাহাড়ে লেগেছে সোনালি রং

বান্দরবানের জুমের পাকা ধানে গন্ধ ছড়াচ্ছে পাহাড় থেকে পাহাড়ে। জুমিয়া পরিবারদের লাগানো জুমখেতে পাকা ধানের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে সোনালি রং লেগেছে পাহাড়গুলোতে। চোখের দৃষ্টির সীমানাজুড়ে দেখা মিলে সবুজ পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে পাহাড়ের জুমের পাকা ধানগুলো সোনালি রং ধারণ করেছে।

পাহাড়ের ঢালুতে উৎপাদিত জুম চাষের ধান কাটা শুরু করেছে জুমিয়ারা। জুমের ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জুমিয়া পরিবারের ছোট-বড় নারী পুরুষ সবাই।

এ বছর বৃষ্টি দেরিতে হওয়ার কারণে জুমের ধান বপনে সময়ের ব্যবধান বেশি হয়েছে, তাই এখন কেউ ধান কাটা শুরু করেছেন, কোনো কোনো জুমের ধান এখনো সবুজ আবার কোথাও ধান পাকা শুরু হয়েছে। 

কেউ ধান কাটার আগে সাথি ফসল বিশেষ করে মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, মারফা ও চিনাল সংগ্রহ করা শুরু করেছেন, আর কেউ জুমের পাকা ধান কাটার জন্য উপযুক্ত সময় অপেক্ষা করছেন। তিন পার্বত্য জেলায় বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় এখন জুমচাষিদের দম ফেলার ফুসরত নেই, জুম চাষ ঘিরে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।

সরেজমিন জেলা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে থানচি উপজেলা বলিপাড়া ইউনিয়ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কমলা বাগানপাড়ায় আদি পদ্ধতিতে পাহাড়ের ঝোপঝাড় পুড়িয়ে পাহাড়ের ঢালুতে চাষ করা জুম খেতের পাকা ধান কাটছে ১৫ জনের একটা দল। শ্রমিকের সঙ্গে জুড়িয়া পরিবারের ছোট-বড় নারী জুমের ফসল ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আশপাশের পাহাড়গুলোতে দূরদূরান্তে শোভা পাচ্ছে জুমের পাকা ধানের সোনালি রং। 

জুমচাষি মিলন ত্রিপুরা বলেন, এ বছর ১২ আড়ি জায়গায় (১ আড়ি সমান ১০ কেজি) ১২ আড়ি ধানের জুম করতে পেরেছেন। এ বছর জুমের ধান তেমন ভালো হয়নি। কারণ যখন বৃষ্টির দরকার ছিল তখন বৃষ্টি হয়নি, আর যখন রোদ দরকার তখন অতিবৃষ্টি। আগে সময় মতো রোদ-বৃষ্টি হলে জুমের ধান ভালো হতো, এখন সময় মতো রোদ-বৃষ্টি কিছুই হয় না, প্রকৃতিও উল্টো হয়েছে। এ বছর জুম থেকে ২শ আড়ি ধান পাওয়ার আশা করছেন। যদি জুমের ধান ভালো হতো তাহলে ৩শ আড়ি ধান পেতেন, তারপরও যা পাবেন এ বছর জুমের ধানে কোনোমতে বছর যাবে।

জুমচাষি পুষ্পরানী ত্রিপুরা বলেন, তারাও জুম চাষ করেছেন; কিন্তু তাদের জুমের ধান এখনো কাটার উপযুক্ত হয়নি। তাই তাদের প্রতিবেশী দুলাভাইয়ের পাকা ধান শ্রমের বিনিময়ে কাটতে সহযোগিতা করছেন। কিছুদিন পর তাদের জুমের ধান কাটার উপযুক্ত হলে তাদের থেকেও শ্রম দিয়ে জুমের ধান কাটার সহযোগিতা পাবেন।

প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জুমের জায়গা নির্ধারণ করা হয়, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুম চাষের জন্য নির্ধারিত জায়গায় জঙ্গল কাটা হয়, তারপর কাটা জঙ্গল রোদে শুকানোর পরে মার্চ-এপ্রিল মাসে কাটা জঙ্গল আগুন দেওয়ার জন্য প্রথমে ফায়ারিং লাইন করে জঙ্গল পোড়ানো হয়। এপ্রিল মাসজুড়েই জুমের জায়গা পরিষ্কার করে ধান বপনের জন্য প্রস্তুত করে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে। বৃষ্টি হলেই জুমের জায়গায় ধানসহ সাথীফসল বপন করা হয়।

যারা বৈশাখ মাসের প্রথম বৃষ্টির পর জুমে ধানসহ সাথীফসল বপন করতে পারেন তাদের ধান আগে পাকা শুরু করে। আর যারা একটু দেরিতে বপন করেন তাদের ধান দেরিতেই পাকে।

প্রতিবছর আগস্ট মাসের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে জুমের ধান কাটা শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত জুমের ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো প্রক্রিয়া চলে। ধান শুকানো শেষে জুমঘর থেকে মূলঘরে ধান স্থানান্তর করার পর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি  মাস পর্যন্ত চলে ঘরে ঘরে জুম ধানের নবান্ন উৎসব। 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলায় জুম আবাদের তথ্যমতে, বিগত ২০২১ সালে আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জায়গায় আর উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৪৬৭ দশমিক ২২ মেট্রিক টন চাল। ২০২২ সালে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ২৯২ হেক্টর জায়গায় আর উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৪১৮ দশমিক ১২ মেট্রিক টন চাল। ২০২৩ সালে জুম চাষ আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর জায়গায় আর উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৭১ মেট্রিকটন চাল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাসান আলী জানান, চলতি বছর প্রায় ৮ হাজার ৩শ হেক্টর জায়গায় জুমের আবাদ হয়েছে। জুমে ধান ছাড়াও সাথি ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এ বছর জুমের ফলন ভালো হবে আশা করা যায়। ইতিমধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলায় জুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায়ও জুমের ধান কাটা শুরু হবে।

উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষিবিভাগ বিভিন্ন পরামর্শ এবং স্থানীয় জাতের সঙ্গে হাইব্রিড জাতীয় ধান উৎপাদন করার জন্য উৎসাহ ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে বলে জানান তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম