Logo
Logo
×

সারাদেশ

হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষকে জোরপূর্বক পদত্যাগ

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম

হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষকে জোরপূর্বক পদত্যাগ

এবার চট্টগ্রামে আরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নাম দিয়ে বহিরাগতরা ঐতিহ্যবাহী হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষকে বলপ্রয়োগ করে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। একইভাবে অধ্যক্ষকে মারধর করে কলেজের আরও ৩ শিক্ষককে বরখাস্ত করতে বাধ্য করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করে তারা চরম নৈরাজ্য চালায়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহিরাগত ছাত্রদের হত্যার হুমকিতে একপর্যায়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুব অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে যান। 

যে তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করতে বাধ্য করা হয়েছে তারা হলেন- মো. দবির উদ্দিন, মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন ও একেএম ইসমাইল। তিনজনই এই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। তারা দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়ার কারণে কলেজের স্বার্থে নিয়োজিত রাখা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন দাশ যুগান্তরকে বলেন, বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে এ অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। তারা অন্যায়ভাবে কোনো যুক্তি ছাড়াই ভয়ভীতি দেখিয়ে উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। তিন শিক্ষকের বরখাস্ত আদেশে তাকে স্বাক্ষর করতেও বাধ্য করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যারা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছে তারা সবাই বহিরাগত। কলেজের শিক্ষার্থীরা এমন ঘটনা ঘটাতে পারে না। তাছাড়া জোরপূর্বক পদত্যাগ বা বরখাস্ত আদেশে স্বাক্ষর নেওয়া হলেও তার কোনো বৈধতা নেই বলে জানান অধ্যক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৪ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজ। এটি নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন চান্দগাঁও এলাকায় অবস্থিত। এই কলেজে ৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন শতাধিক। নগরীতে রাজনীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবেই বেসরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচিত। 

বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ব্যক্তিগত অর্থায়নে ও উদ্যোগে চট্টগ্রামে যে ৪০টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন- হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজ তার অন্যতম। বিশাল ক্যাম্পাসের সব জমি-জমা ভবন তাদের অর্থায়নে হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে একটি একাডেমিক ভবন দেওয়া হয়েছে। ১২ জনের মতো শিক্ষককে দেওয়া হয় এমপিও। অন্যদের বেতন ও আনুষাঙ্গিক খরচ কলেজের আয় থেকে, ঘাটতি থাকলে তা বিএসসি পরিবার থেকে দেওয়া হয়।

কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই এ কলেজে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল একটি পক্ষ। কখনো বৈষম্যবিরোধী, কখনো এলাকার বাসিন্দা হিসেবে দাপট দেখিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে তারা দাবি-দাওয়ার নামে প্রতিষ্ঠান অচল করার চেষ্টা চালায়। বেতন কমানো ও কিছু শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের মাসিক বেতন কমানো হয়। 

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বহিরাগতরা সদলবলে ক্যাম্পাসে ঢুকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের রুমে গিয়ে অরাজকতা শুরু করে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে উপাধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে জোরপূবর্ক উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুবকে পদত্যাগপত্রে সই করতে বাধ্য করা হয়। এ সময় পেছন থেকে একজন তাকে ‘ছুরি ধরে’ বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান। একপর্যায়ে উপাধ্যক্ষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে অধ্যক্ষের হাতে তিন শিক্ষকের নাম সম্বলিত একটি বরখাস্ত আদেশের কপি ধরিয়ে দিয়ে সেটিতেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, এর আগে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং কমিটি বাতিল করা হয়। মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনকে প্রধান করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর একটি নতুন অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দেন। কিন্তু এক সপ্তাহ না যেতে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার পূর্বের অ্যাডহক কমিটি বলবৎ থাকা অবস্থায় আরেকটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির সভাপতি করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরীকে। একই কলেজে দুই অ্যাডহক কমিটি নিয়েও সৃষ্টি হয় জটিলতা। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত অ্যাডহক কমিটির প্রধান মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারণ করায় তিনি কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল্লাহ নূরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি রাজনীতিমুক্ত হলেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কতিপয় নেতা সরকারের পটপরিবর্তনের সুযোগে কলেজটি নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারাই মঙ্গলবার ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের মহল বিশেষের এ অভিলাষ পুরো প্রতিষ্ঠানকেই ধ্বংস করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম