ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি ছাড়লেন সেনবাগ আ.লীগ সম্পাদক
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিসহ আর কোনো দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানা গেছে।
শুক্রবার বিকালে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন খাঁটি ব্যবসায়ী। ব্যবসা আর রাজনীতি একসঙ্গে যায় না। রাজনীতি আমার পেশাও না, নেশাও না। বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে পটপরিবর্তনের পরেও যেভাবে রাজনীতি কলুষিত হচ্ছে এবং এক কর্তৃত্ববাদের পতন না হতেই আরেক কর্তৃত্ববাদ সৃষ্টি হওয়ার পথে যেভাবে এগোচ্ছে, সেই কারণে এ প্রতিহিংসাপরায়ণ, নোংরা ও অসৎ রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া উত্তম বলে মনে করি। তাই সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি নিলাম।’
জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন খেতাবপ্রাপ্ত শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। খুব ছোটবেলায় পিতাকে হারিয়েছি। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার পিতা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করার পর সব সময় এলাকার মানুষের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি’।
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘বৃহত্তর পরিসরে সেনবাগের মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখি। যার জন্য রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবায় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ পিতার আত্মত্যাগ এবং নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য ও দলের জন্য দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় বিভিন্ন অবস্থানে কাজ করেও দলের কাছে সেই মূল্যায়ন পাইনি। বরং যারা কখনো দল করেনি বা যাদের আত্মিক সম্পর্ক সেনবাগের মাটি ও মানুষের সঙ্গে ছিল না, তারাই দলের মনোনয়ন পেয়ে একতরফা ভোটে বারবার জনপ্রতিনিধি হয়ে সেনবাগবাসীকে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত শোষণ করেছেন এবং সেনবাগবাসীর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। আর আমার মতো ত্যাগী কর্মীর কোনও মূল্যায়ন হয়নি। সর্বশেষ একতরফা জাতীয় নির্বাচন ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনের দিনও আমার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক’।
ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার হাত ধরে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সুন্দর নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
এ বিষয়ে জানতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে ফোন দেওয়া হলেও সবার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
জাহাঙ্গীর আলম সেনবাগ উপজেলার ছমিরমুন্সীর হাট এলাকার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা তরিক উল্যাহ বীরবিক্রমের ছেলে। তিনি এলাকায় লায়ন মানিক নামে পরিচিত। ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে তার বাড়িতে এবং মালিকানাধীন বিপণি-বিতানে হামলা-ভাঙচুর করা এবং একাধিক মামলায় জড়ানো থেকে হতাশ হয়ে তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নোয়াখালীর সেনবাগের লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িয়ে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রোববার দুপুর ১২টায় কলেজের সামনে ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচি পালন উপলক্ষে সকাল থেকে কলেজের শিক্ষার্থী এলাকার বাসিন্দা ও শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে তারা কলেজের সামনের ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনকারীরা এ সময় তাদের দাবি সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন বহন করেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন কলেজের দাতা সদস্য ফিরোজ আলম, অধ্যক্ষ নুরুল আলমসহ শিক্ষার্থীদের অনেকেই।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক একজন শিল্পোদ্যোক্তা এবং খেতাবপ্রাপ্ত শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। একইসঙ্গে তিনি সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এলাকায় নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি সেনবাগ উপজেলার শায়েস্তানগর এলাকায় লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি যখন মানসম্পন্ন পাঠদানে এবং ফলাফলে সব মহলের সুনাম অর্জন করেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে একাধিক রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কলেজটিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। আমরা তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং মিথ্যা মামলা দায়েরকারী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন বিপণিবিতান ও বাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। সব মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে আসতে না পারায় শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানসহ কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে।