আউশের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম, বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ
মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম
ফাইল ছবি
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মোকাম নওগাঁর মহাদেবপুরে আউশের ভরা মৌসুমেও দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। বৃহৎ এ মোকামে চালের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। এতে বিপাকে পড়ছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা এবং মাঝারি চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে এবং চিকন চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা।
গত এক সপ্তাহ আগে মোটা জাতের স্বর্ণা-৫ চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন সে চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়। মাঝারি জাতের ব্রি-২৮ চাল ৫২ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়। জিরাশাইল চালের দাম ১ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকায়। গত ১ সপ্তাহ আগে এ চালের কেজি ছিল ৬০ টাকা।
চালের এ দাম বৃদ্ধিতে চাল কিনতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। তাদের আয়ের বড় একটা অংশই খরচ হয়ে যাচ্ছে চাল কিনতে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে দাম বৃদ্ধির কারণে খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে।
আবার মোকামের চালকল মালিকরা বলছেন, ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দাম বাড়ছে।
বড় বড় মিল মালিকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং দেখা দেওয়ায় চাল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাজারে চালের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এ কারণেও চালের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন মিল মালিকরা।
চালের দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ধার-দেনার কারণে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। কৃষকদের থেকে কমদামে এ ধানগুলো ক্রয় করে মজুত করেন এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী মজুদদার ও ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা সদরও আশপাশের এলাকায় ৫-৭ জন মজুদদার হাজার হাজার মণ ধান মজুত করে চালের বাজার অস্থির করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের চালকল নেই এরা শুধু ধান মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা সদরের ফাজিলপুর, নাটশাল, শিবগঞ্জমোড়, আখেড়া ও দোহালীতে এসব মজুদদারদের বৃহৎ বৃহৎ গুদামে হাজার হাজার মণ ধান মজুত রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন, চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছিল। ইতোমধ্যেই এসব জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়েছে। এবার ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। আউশ মৌসুমে চাল উৎপাদন হয়েছে ৪৮ হাজার ১৬৬ মেট্রিকটন। অন্যান্য বছর আউশ ধান বাজারে আসার পর চালের দাম কমলেও এবার কিছুটা উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
উপজেলা চাউল মালিক সমিতির আহবায়ক মো. শামসুল আলম বাচ্চু বলেন, সাধারণ কৃষকের ঘরে এখন আর ধান নেই, বড় বড় ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয় করে মজুত করে রেখেছেন। বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় আরও লাভের আশায় তারা ধানগুলো এখন বাজারে ছাড়ছে না। এ কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়মিত প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করতে হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোহাজের আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আউশ মৌসুমে উৎপাদিত মাঝারি চালের দাম খুব একটা না বাড়লেও ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত বাজার মনিটরিংসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।