নড়াইলে সৎমায়ের হাতে প্রাণ হারালো চার বছরের এক শিশু। রাশেদুল নামে হতভাগ্য শিশুটিকে তার সৎমা রহিমা প্রতিহিংসার কারণে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। এরপর তাকে বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাশেদুলের লাশ দাফন করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত সৎমাসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজন ও এলাকাবাসী এ বর্বরতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।
নড়াইল সদর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, রাশেদুলের লাশের গলায় নখের আঁচড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। রহিমা তার জা রুমার সহযোগিতায় রাশেদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার সকালে সরজমিনে মির্জপুর গিয়ে দেখা গেছে, পরম আদরের একমাত্র শিশুসন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা আব্দুর রহিম। তার বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে মির্জাপুর পশ্চিমপাড়ার পরিবেশ।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান, স্বামী আব্দুর রহিমের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দুধের শিশুসন্তান রাশেদুলকে ফেলে তার মা ফারিয়া আড়াই বছর আগে চলে যান। এরপর তিনি অন্যত্র গিয়ে বিয়ে করেন এবং ঘর বাঁধেন। রাশেদুলকে ফেলে তার মা ফারিয়া চলে গেলে, দুধের শিশু রাশেদুল তার দাদা-দাদির আশ্রয়ে প্রতিপালিত হয়।
পরে রহিমাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন আব্দুর রহিম। তবে রহিমা সৎছেলে রাশেদুলকে নিজের করে নিতে পারেনি। রহিমের সংসারে আসার পর থেকেই সে রাশেদুলকে হিংসা করত।
একপর্যায়ে ১৬ সেপ্টেম্বর বিকালে রাশেদুল নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর গভীর রাতে বাড়ির পাশের ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর সবার সন্দেহ রাশেদুলের সৎমা রহিমার ওপর গিয়ে পড়ে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে রাশেদুলকে হত্যার কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে প্রতিহিংসাবশে তার জা (স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী) রুমার সহযোগিতায় রাশেদুলকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে রহিমা। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে আটকে রেখে পুলিশে দেন নিহত রাশেদুলের পরিবার ও এলাকার লোকজন।
সোমবার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাশেদুলের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। স্বজনরা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।
নড়াইলের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর জানান, শিশু রাশেদুলের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য পুলিশ যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।