Logo
Logo
×

সারাদেশ

চলন্ত বাইকে শুয়ে-বসে সবই করেন আজাদ

Icon

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২০ পিএম

চলন্ত বাইকে শুয়ে-বসে সবই করেন আজাদ

কুড়িগ্রামে চলন্ত বাইকে শুয়ে, বসে ও বিভিন্ন ভঙ্গিমায় মোটরবাইক চালিয়ে বিনোদন দিচ্ছেন আজাদ আলী নামে এক ব্যক্তি। তিনি কখনো কখনো বাইকেই করছেন খাওয়া-দাওয়া। এ অসম্ভব নৈপুণ্যতা দেখে সবাই হতবাক বিস্মিত। এসব দেখতে মানুষজন ভিড় করে দেন বাহবা।

প্রায় ৫ বছর ধরে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারীর ব্যস্ততম সড়কে আমজাদ আলী দক্ষ হাতে বাইক চালিয়ে এলাকাবাসীসহ পথচারীদের বিনোদন বা আনন্দের খোরাক জোগাচ্ছেন। তাকে কখনো পড়তে হয়নি দুর্ঘটনায়। আজাদ আলী তার বাইক নিয়ে সড়কে নামলেই বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ তার কসরত দেখতে রাস্তার দুপাশে ভিড় জমাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম জেলা শহর ছেড়ে ধরলা ব্রিজের দক্ষিণ-পূর্বে ৭ কিলোমিটার গেলেই আজাদ আলীর বাড়ি। জেলা সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পাটেশ্বরী এলাকার ইসলামপুর গ্রামে তার বসবাস। স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার।

বাইক চালানো তার শখ। পেশায় দিনমজুর আজাদ আলী কৃষি কাজের পাশাপাশি সময় সুযোগ পেলে অটো চালিয়েও সংসার চালান। টানাটানির সংসার হলেও বাইক চালানোর নেশা তিনি ছাড়তে পারেননি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই একটি বাইকের স্বপ্ন দেখতেন। এক সময় এনজিও থেকে ঋণ করে সাড়ে ১৬ হাজার টাকায় একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরবাইক কেনেন। এরপর বাইকটি মডিফাই করে ২০০০ সালে শুরু করেন হাত ছেড়ে দিয়ে মোটরবাইক চালানোর কাজ। পরে চলন্ত বাইকে শুয়ে, বসে ও বিভিন্ন ভঙ্গিমায় মোটরবাইক চালিয়ে সবার নজর কাড়েন তিনি।

তাকে নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও মিডিয়া কাজ করার পর আজাদ আলী এখন ইউটিউবে জনপ্রিয় একটি নাম। তার এই কসরত দেখে খুশি আশপাশের মানুষ। তারা বলছেন ব্যস্ততম সড়কে বাইক চালালেও কখনো দুর্ঘটনায় পরতে দেখেননি তারা।

পাটেশ্বরী এলাকার আলেকজন বেগম জানান, আজাদ সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। তাকে হ্যান্ডলে হাত না দিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে দেখলে খুব মজা লাগে। আমরা সবাই হাসাহাসি করি। খুব ভালো চালায় সে।

ওই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মজিবর আলী জানান, আজাদ আলী একজন সহজ-সরল মানুষ। মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেও আনন্দ পায়। অন্যদেরও আনন্দ দেয়; কিন্তু গরিব মানুষের সংসারে অভাব ঘোচানোর কোনো লোক নাই। তাকে সহযোগিতা করলে ভালো হয়।

সৈয়দ আলী নামে একজন জানান, বেচারার কার্যকলাপ নিয়ে অনেক মিডিয়া শুটিং করে নিয়ে গেছে। তারা লাভবান হলেও আজাদ আলী কিছুই পায় না। অনেকে মোটরসাইকেল চালানোর তেলের টাকাটাও না দিয়ে চলে যায়।

এ ব্যাপারে আজাদ আলী জানান, ছোটবেলার বাইক চালানোর নেশাকে এখন কিছুটা পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই; কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতা এখন বড় বাধা। বিনোদনের মাধ্যমে কিছু মানুষকে আনন্দ দিতে পারলেও পরিবারের দৈন্যতা কাটাতে পারছি না। ফলে শত কষ্ট বুকে নিয়ে মানুষকে খুশি করে যাচ্ছি। কেউ ডাকলেই বাইক নিয়ে ছুটে যাই। মানুষের ভালোবাসাই এখন আমার বড় প্রাপ্তি। কখনো কোনো দুর্ঘটনায় পরিনি। পরিবার থেকে কিছুটা বাধা থাকলেও তারাও বিষয়টি মেনে নিয়েছে।

আজাদ আলী সম্পর্কে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান, কোনো জিও বা এনজিও থেকে তাকে সহযোগিতা করা যেতে পারে। এছাড়াও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাকে কাজ করার সুযোগ দিলে তিনি পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারবেন। আর আমরা তার দৃষ্টিনন্দন মোটরসাইকেল চালনার কসরত দেখে আনন্দ উপভোগ করতে পারব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম