Logo
Logo
×

সারাদেশ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

ময়নাতদন্ত ও মামলার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রুবেলের বড় ভাই

উপার্জনক্ষম রুবেলকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

Icon

কিশোরগঞ্জ ব্যুরো

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পিএম

ময়নাতদন্ত ও মামলার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রুবেলের বড় ভাই

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে ঢাকার মিরপুরে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের তারিকুল ইসলাম রুবেল। তবে তার পরিবার এখনও মামলা করতে পারেনি। 

ময়নাতদন্ত ও মামলার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বড় ভাই তরিকুল ইসলাম জুয়েল। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে এখন দিশেহারা রুবেলের পরিবার। তারা এখন চান শহিদ হিসাবে প্রয়াত ছেলের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও ক্ষতিপূরণ।

জানা গেছে, শৈশব থেকেই অনিয়ম ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের হাচলা গ্রামের ফরিদ উদ্দিনের ছেলে মো. তারিকুল ইসলাম রুবেল (২৩)। দরিদ্র পরিবারের হাল ধরতে তিনি একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে মিরপুরের ১০ নম্বর এলাকায় থাকতেন। স্বভাবসুলভ কারণে এবার বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ জনতার কাতারে তিনিও শামিল হয়েছিলেন। 

১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বরের মেট্রোরেল ও বিআরটিসি এলাকায় আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের চার চারটি গুলিতে শহিদ হন প্রতিবাদী তরুণ রুবেল। মাথায় লাগা পুলিশের গুলিতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

পরিবারের দাবি, ওই সময় কারফিউ থাকায় রুবেলকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও নেওয়া যায়নি। ওভাবেই গ্রামের বাড়িতে এনে তাকে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় ডিসি অফিসে গিয়ে লাশের ময়নাতদন্তের আবেদন করেও কাজ হয়নি। পুলিশও এ ঘটনায় মামলা না করতে ভয় দেখিয়ে কালক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ করেন শহিদ রুবেলের বড় ভাই তরিকুল ইসলাম জুয়েল। 

তিনি যুগান্তরকে আরও জানান, ছোট ভাই রুবেলের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু মামলার জন্য কাফরুল থানায় বারবার যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু সেখান থেকে বিভিন্ন অজুহাত এমনকি ভবিষ্যতে বিপদে পড়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে মামলা করা থেকে নিবৃত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকালে কিশোরগঞ্জের পুরাতন স্টেডিয়ামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত এ ঘটনা খুলে বলেন জুয়েল। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে শহিদ রুবেলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও মাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আগামী সপ্তাহে তোমাদের দেখতে বাড়িতে আসব মা।’ কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি রুবেলের। সপ্তাহ গড়ানোর আগেই ওইদিন শেষ রাতেই তিনি বাড়ি ফেরেন গুলিতে ক্ষতবিক্ষত লাশ হয়ে। বিলাপ করতে করতে এমন নিষ্ঠুর ও হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা জানান শহিদ রুবেলের মা হেলেনা আক্তার।

গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী ফার্মেসি মালিক সাজেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শৈশব-কৈশোর বয়স থেকেই রুবেল গ্রামবাসীর কাছে একজন প্রতিবাদী ছেলে হিসাবে পরিচিত ছিল। গ্রামের মানুষের যে কোনো অনিয়ম ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুবেল ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠের তরুণ। 

ছেলে হারিয়ে শোকে কাতর বাবা ফরিদ উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আমার ছেলের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে- এতে আমরা গর্বিত। কিন্তু আমার পরিবারের সে-ই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সে-ই আমাদের অভাবের সংসারের হাল ধরেছিল। তিনি তার সন্তানকে শহিদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম