Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল

দুই লাখ টাকায় ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য প্রাধ্যক্ষের বিশেষ বাথরুম

Icon

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ পিএম

দুই লাখ টাকায় ছাত্রলীগ নেতাদের জন্য প্রাধ্যক্ষের বিশেষ বাথরুম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর‌ জন্য কমন বাথরুম রয়েছে ২৮টি। হলের বাকি ২৭টি বাথরুম পুরাতন ও জীর্ণ-শীর্ণ হলেও একটি বাথরুমের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সম্পূর্ণ টাইলস করা এবং বেসিন ও কমোডসহ বেশ কিছু অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে বাথরুমটিতে। প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছর নতুন করে এসব সুযোগ সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। দেখতে চমকপ্রদ এই বাথরুমটি ব্যবহার করতেন শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। তাই স্বপ্রণোদিত হয়ে বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর। কমিটি গঠনের পর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এই হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব ২২৮ নম্বর কক্ষে থাকা শুরু করেন। তারা দুজনে হলের ২৩৪ নম্বর বাথরুমটি ব্যবহার করতেন। তাই বাথরুম আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ। বাথরুমটি আধুনিকীকরণ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর একটি আবেদনপত্র পাঠান হলের প্রাধ্যক্ষ।

আবেদনপত্রটিতে বলা হয়েছে, ‘...জরুরি ভিত্তিতে বাথরুমটি আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। উল্লেখ্য যে, উক্ত বাথরুমটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারী ব্যবহার করে থাকেন।’

 এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর উক্ত বাথরুমটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, হল প্রশাসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা বাথরুমটি আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেই। এ কাজে আনুমানিক দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বিষয়টিকে মোটেও ভালোভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের শিক্ষার্থীরা হল গুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করে। যেখানে অন্যান্য বাথরুম গুলো অবস্থা খারাপ সেই পরিস্থিতিতে দুজন বিশেষ ছাত্রনেতার জন্য জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিশেষ সুযোগ দেওয়া অন্যায় এবং বৈষম্য। কারণ এই টাকাগুলো কারো ব্যক্তিগত না বরং শিক্ষার্থীদের এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান মুন্না বলেন, বিগত ১৬ বছরে হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হতো, যারা ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবে। ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ছাত্রলীগের রাজত্ব বজায় রাখতে পারবে। বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ শায়খুল কখনোই ছাত্রদের জন্য কিছু করেননি, উল্টো বিভিন্ন সময় ছাত্রদেরকে বিপদে ফেলেছেন। বঙ্গবন্ধু হলের বাকি সবগুলো বাথরুম পুরাতন, জীর্ণ-শীর্ণ হলেও বাবু ও গালিবের ওয়াশরুম অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন। তিনি সবসময় ছাত্রলীগের সেবা করে গেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা কখনো চিন্তা করেননি। এমন একজন শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার কোনো অধিকার নেই।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ শাইখুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বলেন, ‘ওরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছিল। এখানে আমার কিছু করার ছিল না।’

এ বিষয়ে বর্তমান হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জামিরুল ইসলাম বলেন, একজন প্রাধ্যক্ষ এমন ভাষায় আবেদনপত্র লিখতে পারেন না। আমরা এ ধরনের সকল অনিয়ম তদন্ত করে দেখবো এবং উপাচার্য স্যারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, হল প্রাধ্যক্ষদের সকল অনিয়মের নথি আমরা সংগ্রহ করছি। সকল নথি সংগ্রহ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাইখুল ইসলাম মামুন জিয়াদ পদত্যাগ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম