দৈনিক যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মাত্র একদিনের মধ্যেই আলোচিত রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতকে বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ফয়সাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ইউএনও হিসেবে বদলি করা হয়েছে। তার বদলির আদেশের কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে।
তবে পুকুর খনন এবং হাট ইজারা না দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ আরও নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য ইউএনও হাসনাতের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে।
প্রায় এক বছর আগে পবার ইউএনও হিসেবে যোগ দেন আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে গত জুনে পবার কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ছাড়াই ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন তিনি। নওগাঁর আত্রাই থেকে নিজের চাচাতো ভাই রাজীব রনককে এনে তাকে দিয়েই কাজটি করাচ্ছিলেন ইউএনও। রাজীব রনক পবায় ইউএনওর সরকারি বাসভবনেই থাকতেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি বাড়ি নির্মাণে ইটভাটা থেকে ঘুস নেওয়ারও অভিযোগ আছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। পবার হরিয়ানে পুকুর কাটতে দেওয়ার বিনিময়ে ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে ওই ইট ঘুস নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এসব বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার দৈনিক যুগান্তরের তৃতীয় পৃষ্ঠায় ‘পবা উপজেলায় আলোড়ন, ইউএনওর ভাই কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পরেই বৃহস্পতিবারই ইউএনওকে পবা থেকে বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
পবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবায় ঘুসের চুক্তি করে পুকুর খনন করতে দিতেন ইউএনও। কোথাও পুকুর খননের কথা শুনলে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের ফোন করে দেখা করতে বলতেন। চেয়ারম্যানরা পুকুর খননকারীর সঙ্গে মধ্যস্থতা করে টাকা এনে দিতেন। বিঘাপ্রতি চুক্তি হতো ২০ হাজার টাকা।
সম্প্রতি এক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ইউএনওর বিরুদ্ধে পুকুর খননের জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত এক বছরে পবায় অন্তত ২০০ পুকুর কাটা হয়েছে। প্রতিটি পুকুরের আয়তন ১০ বিঘা থেকে ৪০ বিঘা পর্যন্ত। আইন লঙ্ঘন করে ফসলি জমিতে এসব পুকুর খনন করতে দিয়ে ইউএনও কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পবার খড়খড়ি হাটের ইজারা বাতিল করেন ইউএনও। নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে ভূমি অফিসের তহশিলদার খাস আদায় করবেন। কিন্তু খাস আদায় করছেন পারিলার ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদের লোকজন। হাটটিতে সব খরচ বাদ দিয়েও রোজ অন্তত ৫০ হাজার টাকা আদায় হয়। আদায় করা টাকার বড় অংশ ইউএনও এবং চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
যদিও যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, ইউএনও হাসনাতের সব অনিয়মের সঙ্গী অফিস সহকারী কাম-মুদ্রাক্ষরিক সাদ্দাম হোসেন। সম্প্রতি এই সাদ্দামকে অন্য উপজেলায় বদলি করা হয় কিন্তু সাদ্দামকে এখনো সন্ধ্যার পর অফিসে এনে কাজ করাতেন ইউএনও। সরকারি গাড়ির অপব্যবহার এবং উপজেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ছিল ইউএনও হাসনাতের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে বৃহস্পতিবার ইউএনও আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাতকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এমনকি খুদে বার্তা (মেসেজ) দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আগের দিন বুধবার তিনি চাচাতো ভাইকে দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ করানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে কৌশলে কথা বললে তা স্বীকার করেছিলেন ইউএনওর চাচাতো ভাই রাজীব রনক।