Logo
Logo
×

সারাদেশ

দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন দালালদের আখড়া

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা)

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ পিএম

দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন দালালদের আখড়া

দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকাণ্ড নিয়ে একাধিকবার উত্থাপিত হওয়ার পরও কোনোভাবেই নির্মূল হচ্ছে না রাজধানীর পার্শ্ববর্তী দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। 

প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের মালিক কর্তৃপক্ষ। সব অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

এর সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে অনুমোদনহীন বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা। এসব ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন যেন মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছেন।

শক্তিশালী এমন দালাল সিন্ডিকেট ভাঙতে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেন। একের পর এক উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে সরব আলোচনা থাকলেও পরবর্তীতে তা যেন অদৃশ্য কারণে নীরবতায় রূপ নেয়। 

প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোমাত্র তাদের প্রেসক্রিপশন হাসপাতালের ভেতর থেকেই বেসরকারি ক্লিনিকের দালাল চক্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায় তাদের নির্দিষ্ট বেসরকারি ক্লিনিকে। এতে খেটেখাওয়া অনেকে অসহায় মানুষ তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকের দালালদের খপ্পরে পড়ে হিমশিম খান।

অনেকেই অর্থনৈতিক কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে না পেরে কোনোরকম ওষুধ কিনে ফিরে যান আল্লাহর ওপর ভরসা করে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক চিকিৎসক জানান, জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওতপেতে থাকেন বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধি (দালাল চক্র)। উন্নত চিকিৎসার নাম করে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার স্বপ্ন ব্যয়ের সুব্যবস্থা রয়েছে।

প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও ক্লিনিকের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মালিকপক্ষের সঙ্গে দালাল চক্রের যোগসাজশও রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুধু দালালই নয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পার্শ্ববর্তী জায়গায় গড়ে উঠেছে ৫টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরকারি হাসপাতালের খোদ কর্মরত ডাক্তার দিয়েই এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান চলছে; যার কারণে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা রোগীদের প্রয়োজনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়ে তারা সরকারি হাসপাতালের ডিউটির সময় বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে সেবা প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে। 

এর ফলে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ রোগী। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের অনেক ডাক্তারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক ভালো থাকায় তাদের সরকারি সেবা না দিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে রোগীদের ভালো সেবার কথা বলে সেখানে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন।

এ সুযোগে সরকারি হাসপাতালের পাশে গড়ে ওঠা পার্শ্ববর্তী ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকের দালাল চক্র সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন শিফটে ভাগ করে বিভিন্ন ডাক্তারের রুম ও  জরুরি বিভাগে অবস্থান করেন। এছাড়া প্রশাসন অথবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সিসি ক্যামেরায় দেখলে প্রতিষ্ঠানটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন বিভিন্ন ডাক্তার ও কর্মচারীদের ফোনে সতর্ক করার অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সব সময় তো আমরা বসে বসে দালালদের পাহারা দিতে পারব না। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অসত্য মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন।

ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমাদের কাছে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের দালালদের ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম