শ্রমিক লীগ সভাপতির বাড়িতে সমন্বয়ক হাসনাত, আলোচনার ঝড়
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রাম সফরকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ পটিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সামশুল ইসলামের বাড়িতে রাতযাপন করেন। এই সামশুল ইসলাম আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পটিয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা মামলার ৩৩ নম্বর আসামি।
এমন একজন ব্যক্তির বাড়িতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাতের অবস্থান করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সামশুল ইসলামের ছেলে ঢাবি শিক্ষার্থী সাকিবের আমন্ত্রণেই হাসনাত সেখানে গেছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রগুলোর অভিযোগ, সামশুল ইসলাম বহুরূপী নেতা। তিনি একসময় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। পরে শ্রমিক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসেন। এখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের ওপর ভর করেছেন। মূলত এটি করে তিনি যখন যে সরকার বা দল ক্ষমতায় আসে তাদের লেবাস নিয়ে এলাকায় নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি ধরে রাখতে চান। এটি করে এলাকায় বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্লান্টসহ শিল্পকারখানার জায়গা-জমির দালালি, তেলের ব্যবসা করে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন তিনি।
পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম যুগান্তরকে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের যিনি সুবিধাভোগী, যার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলা হয়েছে তার বাড়িতে একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাতযাপন করবেন সেটা আমরা বিশ্বাস করতেই পারছি না। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভুল বার্তা যাচ্ছে। একজন সমন্বয়ক কার বাড়িতে যাবেন, কোথায় থাকবেন তা দেখেশুনে করা উচিত।
৮ সেপ্টেম্বর লালদিঘি মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে সমাবেশ ছিল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে এই সমাবেশ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম সফর করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। বক্তব্য রাখেন লালদিঘির সমাবেশে। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম এলে হাসনাত আবদুল্লাহ পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত পটিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সামশুল ইসলামের বাড়িতে ওঠেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামশুল ইসলামের ছেলে সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এই সুবাদে আন্দোলনের সাথী হিসাবে তার আমন্ত্রণেই হাসনাত আবদুল্লাহ সাকিবের বাড়িতে গেছেন। তার পিতা যে শ্রমিক লীগ নেতা বা মামলার আসামি সেটা হয়তো জানতেন না। জানলে হয়তো হাসনাত সেখানে যেতেন না। তবে এরপরও হাসনাত আবদুল্লাহ সামশুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থানকালীন বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নানা সমালোচনা ও তির্যক মন্তব্য করা হয়।
সূত্র জানায়, সামশুল ইসলাম পটিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন। ২০০১-২০০৫ সালে পটিয়ায় বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ-সদস্য গাজী মো. শাহজাহান জুয়েলের সঙ্গে ছিল তার গভীর সখ্য। তিনি জুয়েল তথা বিএনপির প্রার্থী হিসাবে কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি সামশুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দেন। একপর্যায়ে ২০২২ সালে এসে সামশুল ইসলামকে জাতীয় শ্রমিক লীগ পটিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি করা হয়।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় এমপি ও সরকারি দলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামশুল ইসলাম নিজের রাজত্ব ধরে রাখেন। কোলাগাঁও ইউনিয়নে ৪-৫টি পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে। এসব পাওয়ার প্লান্টের জমি কেনাবেচা থেকে শুরু করে, এসব প্লান্টে তেল সরবরাহ দেওয়া, কালো তেলের ব্যবসা ইত্যাদি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান সামশুল।
১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে পটিয়ায়। মিছিলে হামলা করে আওয়ামী লীগ। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পাশাপাশি পটিয়া কলেজ গেটে অবস্থিত বিএনপি অফিসে ভাঙচুর করে। ওই ঘটনায় ২০ আগস্ট পটিয়া থানায় মামলা (নম্বর : ১৮/২০-৮-২০২৪) করা হয়। মামলার বাদী মোহাম্মদ আলী আহমদ একজন বিএনপি কর্মী। মামলায় সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরী, সাবেক পৌর মেয়র হারুনুর রশীদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলামের সঙ্গে ৩৩ নম্বর আসামি করা হয় সামশুল ইসলামকে।
