Logo
Logo
×

সারাদেশ

দিশাহারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা, ব্যতিক্রম চাঁদপুর জেলা আ. লীগের সভাপতি

Icon

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম

দিশাহারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা, ব্যতিক্রম চাঁদপুর জেলা আ. লীগের সভাপতি

গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় চাঁদপুরেও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের দুই-তৃতীয়াংশ এখন এলাকা ছাড়া হয়ে খুবই বেকায়দায় রয়েছেন। তারা অভিভাবকশূন্যতায় বলতে গেলে দিশাহারা অবস্থায় রয়েছে।

দলের অনেকেই বলছেন, পঁচাত্তরের পরও দল এতটা বিপর্যয়ে পড়েনি। দলের নেতাকর্মীরা এখন ঘরবাড়ি ছাড়া। হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে চরম বিপর্যয় এবং বেকায়দায় তারা। বিশেষ করে গত ১৫ বছর ৬ মাস দলের যারা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, তারা যেমনি বিরোধী দলগুলো এবং জনগণের রোষানলে পড়েছেন, তেমনি ক্ষমতাসীন দলের বঞ্চিত নেতাকর্মীদের রোষানলেও তারা পড়েছেন। এমন রোষানলে পড়ার কারণ হলো— ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করা, ক্ষমতার উত্তাপে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, দলের বড় অংশ নেতাকর্মীকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা।

এমন অভিভাবকহীনতায় চরম বেকায়দায় এবং দিশাহারা অবস্থায় আছে এখানকার আওয়ামী লীগ পরিবার। ৫ আগস্টের পর চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে ব্যাপক হারে। এমনকি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। তবে এই অগ্নিকাণ্ড ৫ আগস্টের আগে জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় দুই-দুইবার আগুন দেওয়ার জেরই মনে করেন সচেতন মহল। 

৫ আগস্ট বেলা আড়াইটার পর থেকে শুরু হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট। এ অবস্থায় জীবন বাঁচাতে পালিয়েছেন সবাই। হামলার পর শুরু হয় মামলা। এ পর্যন্ত চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা হয়েছে তিনটি। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় হয়েছে তিনটি। সদর মডেল থানায় তিনটি এবং কচুয়া থানায় দায়ের করা একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ডা. দীপু মনি, মায়া চৌধুরী, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সেলিম মাহমুদ, নূরুল আমিন রুহুল, দীপু মনির ভাই ডা. টিপুসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের। তাদের সাথে স্থানীয় অসংখ্য নেতাকর্মী এবং মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও মামলার নামীয় আসামি হয়েছেন। নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত আসামি রয়েছে সহস্রাধিক। মামলার আসামি হওয়ায় নেতাকর্মীরা ঘরবাড়ি ছাড়া। নানা জায়গায় তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন অবস্থায় তারা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবার কেউ কেউ সংবাদকর্মীদের কাছে ফোনে চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। 

তারা বলছেন, গত সাড়ে ১৫ বছর যারা দুই হাতে অর্থ সম্পদ কামিয়েছেন তারা এখন কোথায়? দুঃসময়ে তারা এখন আমাদের পাশে নেই কেন? কেউ বালু মহাল দিয়ে কামিয়েছেন, কেউ পরিবহণ সেক্টর দিয়ে, মনোনয়ন বাণিজ্য করে, তদবির করে এবং দলের পপদবি বিক্রি করে কামিয়েছেন, কেউ ঠিকাদারি করে, ঠিকাদারি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে কামিয়েছেন। আবার কেউ কেউ দখলবাণিজ্য করে, ভূমিদস্যুতা দিয়েও অঢেল ধন সম্পদ গড়েছেন। আইন অঙ্গনেও সরকারি আইন কর্মকর্তা হয়ে একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে অর্থ সম্পদ গড়েছেন। সেই তারা এখন কোথায়? দলের অসহায় সাধারণ নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে তারা এখন তাদের পাশে নেই কেন? অথচ ওইসব নেতার জন্যে এই সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকতেন। দিনে রাতে যখনি সেসব নেতা কল দিতেন সব ফেলে নেতার ইচ্ছে পূরণে সচেষ্ট থাকতেন। সকল সুযোগ-সুবিধা, ভাগ-বাটোয়ারা এবং দেনা-পাওনার বেলায় তারা থাকতেন বহু দূরে, বঞ্চিতদের কাতারে। বিপদে পড়া এসব বঞ্চিত নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের এখন এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়। তাদের আরও খেদোক্তি হচ্ছে- সাড়ে ১৫ বছরে তো বহু কামিয়েছেন! অনেকে আঙুল ফুলে বিশাল বটগাছ হয়েছেন! এখন আপনারা কোথায়? আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের খোঁজখবর নেওয়ার মতো সময় আপনাদের নেই। এভাবেই নেতাকর্মী সমর্থকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়। তাতে তারা যে এখন অভিভাবকহীন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এসব বিষয়ে জানতে সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে ফোন দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়ায় কথা বলা যায়নি। তবে ব্যতিক্রম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন আহমেদ। তিনি নিজ বাসায় অবস্থান করছেন ও ফোন রিসিভ করছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে বা তার বাড়িতে হামলা করেনি, কটূক্তিও করেনি। এসব বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ক্ষমতাসীন দলের জেলা সভাপতি হিসেবে কখনই অন্যায় ও লুটেরাদের প্রশ্রয় দিতেন না। চাঁদপুরে বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলে নিজ দলের অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। নিজ দলের অন্যায়কারীদের মোটেও তার কাছে প্রশ্রয় দেননি এমন কিছু নজির সৃষ্টির কথা জানান তিনি। তবে তিনি এ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং মানুষের জানমাল রক্ষা করা এখন জরুরি বলে দাবি জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম