Logo
Logo
×

সারাদেশ

দেবিদ্বার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

Icon

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম

দেবিদ্বার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ছুটি না নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থানসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। 

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতার মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে ছুটি ছাড়া দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একই অফিসে তিন বছরের অধিক সময়ে চাকুরি করার কথা না থাকলেও তিনি ওই পদে গত সাড়ে ৬ বছর ধরে বহাল থেকে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।

পৌর অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি দেবিদ্বারে পৌর সচিব হিসেবে যোগদান করেন মো. ফখরুল ইসলাম। মামলা জটিলতার কারণে নির্বাচিত মেয়র না থাকায় পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ। 

প্রশাসকদের সরলতা ও বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে মো. ফখরুল ইসলাম পৌরসভায় নিজের অনুগত কর্মচারীদের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে নিজের একক আধিপত্য বিস্তার করেন।

এরপর তিনি ওই সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় পৌরসভার বিভিন্ন কেনাকাটায় অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, মশার ওষুধ ক্রয়, লাইট ক্রয়, পৌরসভার আসবাবপত্র ক্রয়সহ কেনাকাটায় ভুয়া ভাউচারে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২০ সালে পৌরসভার জন্য উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের বাসিন্দা নানু মিয়ার থেকে ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। অথচ ওই জমির মূল্য হিসেবে পৌরসভার ব্যাংক হিসাব থেকে ২৮ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৫ টাকা জমির মালেকের একাউন্টে জমা করা হয়।

এর আগে জমির মালিক নানু মিয়া থেকে একটি স্বাক্ষরিত খালি চেক দালালদের মাধ্যমে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম নিয়ে নেন। পরে একই দিন জমির মালিকের হিসাব নম্বর থেকে ওই খালি চেক দিয়ে ৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন ওই কর্মকর্তাসহ তার দালাল চক্র। 

সরকার পতনের পর জমির মালিকের পরিবারের সদস্যরা তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলনকৃত ৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা ফেরত দিতে চাপ প্রয়োগ করলে পৌর সচিব মো. ফখরুল ইসলাম অফিস থেকে আত্মগোপনে চলে যায় এবং আত্মগোপনে থেকেই পৌরসভার কর আদায়কারী রাকিবুল ইসলাম ও সার্ভেয়ার সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা ফেরত দেন ভুক্তভোগীর পরিবারকে।

এরপর পৌর মেয়রের অপসারনের পর গত ১৯ আগস্ট পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম। ওই দিন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম অফিসে উপস্থিত হন। পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা পৌরসভার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলে তিনি পালিয়ে যান। 

এরপর থেকে ছুটি ছাড়া দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিত থাকার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে অফিসে আসেন ফখরুল ইসলাম। খবর পেয়ে ওই দিন বিকালে ছাত্র-জনতা পৌর কার্যলয়ে গিয়ে তার সঙ্গে স্বাক্ষাত করেন এবং বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম পৌর প্রশাসকের অনুমিক্রমে ৪ সেপ্টেম্বর তথ্য প্রদান করার অজুহাতে রাতেই দেবিদ্বার ছেড়ে পালিয়ে যান।  

এছাড়া তিনি পৌরসভার ময়লা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজের পছন্দের এইড বাংলাদেশ নামের একটি কোম্পানী বিনা টেন্ডারে কাজ দিয়ে দেন। ওই খানে ১৬ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করার কথা থাকলেও কাজ করছেন ১০জন কর্মী। অথচ ১৬ জনের বেতন হিসেবে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা মাসিক উত্তোলন করে বাকি ৬ জনের টাকা আত্মসাৎ করেন।

জমির মালিক নানু মিয়ার স্ত্রী খুকি আক্তার জানান, তার স্বামীর নিকট থেকে মিথ্যা কথা বলে একটি ব্যাংক চেক নিয়ে যায় এবং পরদিন ওই চেক দিয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম ও তার সহযোগিরা ৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা উত্তলোন করে নেয়। তার স্বামী টাকা চাওয়ায় তাকে হুমকি ধমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই টাকার জন্য পৌর নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাপ দিলে, তিনি তার দুইজন কর্মকর্তা রাকিব ও সাইফুলের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা পাঠায় এবং তাদের ফোন দিয়ে ফখরুল ইসলাম আমার সঙ্গে কথা বলে ক্ষমা চান এবং বলেন তিনি যত টাকা খেয়েছেন তত টাকাই ফেরত দিয়েছেন। আমি বলেছি এই টাকা আমার স্বামীর হক, তাই পুরো টাকাই আমাকে ফেরত দিতে হবে।

টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে পৌর সার্ভেয়ার বলেন, স্যার (পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা) আমাদেরকে দুই লাখ টাকা দিয়ে জমির মালিক নানু মিয়ার স্ত্রীকে দিতে বলেন, আমরা ওই টাকা তাদের নিকট পৌছে দেই।

অভিযুক্ত পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলামের নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি খুবই অসুস্থ, এখন কথা বলতে পারবনা। 

এ ব্যাপারে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলামের অফিসে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসক জানান, তিনি ছুটিতে আছেন। অথচ পৌরসভায় গিয়ে ওই কর্মকর্তার ছুটির কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম