সাবেক আইজিপি শহিদুল হককে গ্রেফতারে স্বস্তি, মুখ খুলছেন এলাকাবাসী
কে এম রায়হান কবীর, শরীয়তপুর
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হককে দুর্নীতি ও অপকর্মের জন্য গ্রেফতারের খবর পেয়ে তার নিজ বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের নরকলিকাতা ও চান্দনী এলাকার মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে, মুখ খুলছেন শরীয়তপুরবাসী। ভুক্তভোগীরা তার উপযুক্ত শাস্তি চান।
সরেজমিন গেলে স্থানীয় মঙ্গল খান, মিজানুর রহমান জানান, পতিত সরকারের সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হকের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে তাকে ঢাকার উত্তরা ১৬নং সেক্টর থেকে গ্রেফতার করে ৭ দিনের রিমান্ড দেওয়ার খবর পেয়ে তার নিজ বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের নরকলিকাতা ও চান্দনী এলাকার মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে। যারা ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। তারা এখন আনন্দ অনুভব করছেন, মুখ খুলতে শুরু করে দিয়েছেন।
তারা বলেন, সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনেছেন। এলাকায় মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের জমি জমা জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন। কাউকে নামমাত্র টাকা দিলেও অনেকের জমির টাকা দেয়নি। জমি রেজিস্ট্রি ছাড়াই ইমারত নির্মাণ করার অভিযোগ রয়েছে।
এসব ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন- আফাজদ্দিন খান, মরহুম নজরুল ইসলাম সাকিদার, লালন, লিটন কাজী, বাবুল শেক, নুরুল হক শেক, মান্নাস শেক, রিপন সাকিদারসহ অনেকে।
খাদ্যগুদামের সামান্য দারোয়ান আবদুল মজিদ বেপারীর ছেলে একেএম শহিদুল হক শরীয়তপুর স্টেডিয়ামের পাশে বাড়ি কিনেছেন, পদ্মা সেতুর কাছে নাওডোবা এলাকায় ইটভাটা করার জন্য তার ভাতিজা ইমরানকে সঙ্গে নিয়ে ৪ বিঘা জমি কিনেছেন, ঢাকা ধানমন্ডি এলাকায় ১৮ কোটি টাকা দিয়ে ২টি ফ্ল্যাট বাড়ি কিনেছেন। নাওডোবা গোলচক্কর থেকে কুতুবপুর যেতে সড়কের পাশে ৩ বিঘা জমি কিনেছে। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় গোপনে প্রকাশ্যে অনেক জমিজমা কিনেছেন তিনি। দেশ বিদেশে গাড়ি বাড়িসহ হাজার হাজার টাকার মালিক বনেছেন এই শহিদুল হক।
এলাকায় মাছের ঘের করতে গিয়ে অন্যের জমি জোর করে নিয়ে তাদের পাওনা পরিশোধ করেননি বলেও অভিযোগ তার ভাতিজা ইমরান বেপারী, ভাই নুরুল হক বেপারীর ও তার বিরুদ্ধে। তার ভাই একেএম ইসমাইল হক তার ক্ষমতার প্রভাব দিয়ে ২০১৪ সালে ভোজেশ্বর ইউপির চেয়ারম্যান থেকে নড়িয়া উপজেলার চেয়ারম্যান হয়েছেন।
পরবর্তীতে ২০২৪ সালে ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদও একইভাবে চেয়ারম্যান হয়েছেন। ভাইর প্রভাব খাটিয়ে ঢাকায় বাস মালিক সমিতির নেতা হয়ে শত শত টাকার মালিক বনেছেন। ইসমাইল ভাইয়ের প্রভাবে নিজের জামাইকে পুলিশের এসআই চাকরি দিয়েছেন।
সাবেক আইজিপির আরেক ভাই নুরুল হক বেপারী ২০১৬ সালে তার ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে বিনা ভোটে ভোজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন। চান্দনী এলাকার নুরুল হক শেখের বাড়ি দখল করে তাদের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় আইজিপির ভাতিজা ইমরান। তাদের পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারা ৫ আগস্টের পর বাড়ি ফিরে আসেন।
এসব অত্যাচার অবিচারের বর্ণনা করতে গিয়ে ভুক্তভোগী নুরুল হক শেখ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা শহিদুল হকের এহন কুকর্ম ও দুর্নীতির উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় নুরুল হক শেখ বলেন, আমার বাপ-দাদার জমিতে আমরা দীর্ঘদিন যাবত বাড়ি করে থাকি। আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হকের প্রভাবে তার ভাই নুরুল হক বেপারী, ইসমাইল হক বেপারী, ভাতিজা ইমরান বেপারী আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদের জোর করে ঘর থেকে বের করে মালামাল টাকাপয়সা সোনার গহনা লুটপাট করে নিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আমরা আমাদের বাড়িতে আসছি। আমরা শহিদুল হকের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
এ ব্যাপারে নাজমূল হক বাদল বলেন, সাবেক আইজিপি শহরের পাশে আমাদের জমি প্রভাব খাটিয়ে জবরদখল করেছে। আমার ভাগ্নে লিটন কাজির জায়গা জোর করে দখল করে ইমারত নির্মাণ করে মার্কেট করেছে। আমরা ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি।
ভুক্তভোগী শিরিন আকতার বলেন, ছোটবেলা থেকে আমরা চান্দনী এলাকায় আমাদের বাড়িতে বড় হয়ে বসবাস করছি। আইজিপি শহিদুল হকের ক্ষমতার দাপটে আমাদের বাড়ি দখল করে নিয়ে যায়। আমাদের টাকাপয়সা ও মালামাল লুটে নিয়ে যায়। আমাদের মতো অনেকের ওপর অত্যাচার জুলুম নির্যাতন করেছেন। আমার ভাইকে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে আমরা এর বিচার চাই।
নুরুল হক বেপারী বলেন, আমরা কারো জায়গা দখল করেনি। এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট।
এদিকে ইসমাইল হক বেপারী, ভাতিজা ইমরান বেপারীকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।