আরসার অনেক নেতার সঙ্গে সখ্য রয়েছে বদির শ্যালকের
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ পিএম
‘ধৈর্য ধরো, সহ্য করো ওরে শ্রমিক ভাই, মনের মতো সভাপতি আঁরার মামুন ভাই’-চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানে, প্রকাশ্যে নৃত্যের তালে চলছে শ্রমিক নেতার বন্দনা। তথাকথিত বিনোদনের নামে ইউটিউবে প্রচারিত অশালীনতায় ভরা ভিডিওচিত্রটি উখিয়া উপজেলা সিএনজি, অটোরিকশা, টেম্পু সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের বার্ষিক বনভোজনের দৃশ্য। সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার সিদ্দিকী মামুন চৌধুরী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ-সদস্য ও ‘ইয়াবা গডফাদার’ আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তারের চাচাতো ভাই। পরিবহণ খাত থেকে মাসে চাঁদা নিতেন তিনি কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য খাত থেকেও ছিল অবৈধ আয়।
অভিযোগ আছে, জোরপূর্বক মাথাপিছু চাঁদা নিয়ে লোকচক্ষুর সামনে বিতর্কিত মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করে নিজের বন্দনা করানো মামুনের দাপটে অসহায় কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের গণপরিবহণ সেক্টরে নিয়োজিত প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ চার মেয়াদের প্রথম আমল থেকেই উখিয়ায় মামুন শুরু করেন ত্রাসের রাজত্ব। ২০১২ সালে প্রথমে অনুমোদনহীন ও নামসর্বস্ব সমিতি চালু করে জিম্মি করতে থাকেন পরিবহণ শ্রমিকদের। ২০১৫ সালে কথিত ওই সমিতির সদস্য হওয়া ৪৪৮ জন সিএনজি চালকের আমানত হিসাবে রক্ষিত ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে তৎকালীন পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটি। তোপের মুখে পড়ে সে সমিতি ভেঙে দেন মামুন। বছর না পেরোতেই দুলাভাই বদির ক্ষমতার দাপটে দখলে নেন তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া শ্রমিক ইউনিয়নকে।
আট বছর ধরে সরকারিভাবে নিবন্ধিত ও বর্তমানে প্রায় ১ হাজার সদস্যের এই সংগঠনকে ব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন মামুন। সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে করেছেন মার্কেট, দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলাফেরার পাশাপাশি বানিয়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি। উপজেলার দশটি পয়েন্টে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলে নিজের অনুগতদের বানান লাইনম্যান, যেখানকার চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ টাকা হিসাবে মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেন। এছাড়াও হাইওয়ে পুলিশসহ প্রশাসনকে আয়ত্বে রাখার কথা বলে টোকেন দিয়ে সদস্যদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা হারে প্রতি মাসে আদায় করা আরও ১০ লাখ টাকা ঢুকত মামুনের পকেটে।
সমিতির সদস্যরা জানান, সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আদায় ছাড়াও বিচারের নামে ঘুস নেওয়ার মতো এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেননি মামুন। আলি হোসেন নামে স্থানীয় এক সিএনজি চালক বলেন, লাইন ও সমিতি পরিচালনাসহ প্রশাসনকে ম্যানেজের কথা বলে আমাদের রক্ত-ঘামের অজস্র টাকায় পকেট ভরেছে রক্তচোষা মামুন। এমনকি বিচার-সালিশের নামে চালক ভাইদের ওপর সে চালাত নির্যাতন।
সংগঠনের অর্থ সম্পাদক জুবাইদুল হক জুয়েল বলেন, দায়িত্বে থাকার পরও সংগঠনের কোষাগার পরিচালনায় আমার কোনো অধিকার ছিল না। সভাপতি নিজেই সদস্যদের কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। টাকা ও হিসাবসহ যাবতীয় তথ্য বুঝিয়ে না দিয়ে এখন তিনি পলাতক। আমরা আমাদের পাওনা ফেরত চাই।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ জগতেও আছে মামুনের প্রভাব। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার অনেক নেতার সঙ্গে তার সখ্যতার প্রকাশ্য প্রমাণ মেলে সরকার পতনের পরদিন। জাহেদ নামে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যানুযায়ী, আরসার ভাড়াটে শতাধিক সন্ত্রাসী এনে উখিয়া স্টেশনে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মামুন এবং ছুড়েন কয়েক রাউন্ড গুলিও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ৬ তারিখের পর থেকে এলাকায় দেখা যায়নি মামুনকে এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম হোসাইন জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পূর্ব-পরবর্তী সময়ে সহিংসতার ঘটনায় উখিয়া থানায় তিনটি মামলার আসামি মামুন।