Logo
Logo
×

সারাদেশ

৩০০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ বাখরাবাদ গ্যাসের এমডি-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

Icon

ইকবাল হোসেন সুমন, বুড়িচং (কুমিল্লা)

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পিএম

৩০০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ বাখরাবাদ গ্যাসের এমডি-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

সাড়ে তিন বছরে ঘুস আর দুর্নীতির মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক এমডি শংকর বাবু ও কোম্পানিটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী ও বেসরকারি কিছু ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

এমডি শংকর বাবু সম্পদের পাহাড় গড়েছেন স্ত্রী-পুত্র শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের নামে। স্ত্রী ও পুত্রের নামে কুমিল্লার কালীরবাজারে কিনেছেন ১৩০ বিঘা জমি। চট্টগ্রাম, ফ্ল্যাট, বাড়ি, মিরসরাইয়ে বাড়ি, মিরসরাই মৌজায় ১৫০ বিঘা জমি। পরিবারের সবাই ধনী তার হাত ধরে। অবৈধ উপায়ে ১৫-২০ হাজার পরিবার, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, ফিলিং স্টেশন মালিকের কাছ থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

অবৈধ সংযোগ দেওয়া, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নামে, নতুন সংযোগ দেওয়ার নামে, অবৈধ সংযোগ দিয়ে এমডি শংকর বাবু গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের আরও অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জন। যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিভিন্ন অজুহাতে সংযোগ কেটে দিয়ে ও সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলে কুমিল্লার আলেখারচড় বিশ্বরোড সাবুরিয়া সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশন, মাস্টার সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশন, রাহাত সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশন, বুড়িচং খোরশেদ আলম সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এছাড়া এমডি শংকর বাবুর শ্বশুরবাড়ি এলাকা কালিবাজার এলাকা, কুমিল্লা সদর, শংকর পুর, দুর্গাপুর, মনিপুর, করিঅলপাড়া, মোকাম, পাঁচকিতা, কোরাপাই, নিমসার, বুড়িচং কাছারিতলা, মহিনপুর, রামপুর, কুসুমপুর, কামাড়খাড়া গ্রামের ১৫-২০ হাজার পরিবারের কাছে থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচয় দিতেন এমডি শংকর বাবু। কাউকে কোনো পাত্তাই দিতেন না। সব কিছুই করতেন নিজের ইচ্ছামতো। ঘুসের টাকা পেতেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড বোর্ড চেয়ারম্যান পর্যন্ত।

কামাড়খাড়া এলাকায় ঠিকাদার মনির হোসেন বলেন, আমাদের কাছ থেকে এই এমডি সংযোগ দেওয়ার নামে নিয়েছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা। সংযোগ দেওয়ার নামে পরে আর সংযোগ দেওয়া হয়নি। গ্রাহকরা আমাকে ধরেন। এমনভাবে কুমিল্লাসহ নোয়াখালী, ফেনী বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়েছেন প্রায় ২০০০ কোটি টাকা।

ঠিকাদার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শংকর বাবু ঘুস ছাড়া কিছুই বুঝতেন না। যখন খুশি কাউকে সংযোগ দিতেন, যখন খুশি তিনি সংযোগ বন্ধ করে দিতেন। তার ইশারায় চলত কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস অফিস। কেউ তাকে ভয়ে কিছু বলতে পারতো না। তার ইশারা ছাড়া কোনো ফাইল নড়ত না। 

কুমিল্লা বুড়িচং ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বুড়িচং খোরশেদ আলম সিএনজি মালিক মো. খোরশেদ আলম বলেন, শংকর বাবু আমাকে অনেক হয়রানি করেছেন। তার নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে আমার কাছে ১০ কোটি টাকা চেয়েছিলেন আমি না দিলে আমাকে ২ বছর হয়রানি করেছেন। আমাকে ঘুরতে হয়েছে টেবিলে টেবিলে। ঘুস ছাড়া ফাইল নড়ে না। আড়াই বছর পর আমি সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করে নতুন করে সংযোগ পাই। 

কুমিল্লা আমতলী সাবুরিয়া সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনের মালিক মাসুদুর রহমান বলেন, আমার কাছে চেয়েছিল ১৫ কোটি টাকা আমি দিতে না চাইলে আমার সংযোগটি কেটে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় আমার পাম্প। আমাকে হয়রানি করা হয় ৩ বছর ধরে। পরে আমি এমডির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট মামলা দায়ের করেছি। মামলা হাইকোর্টে চলমান।

তিনি বলেন, এমডি শংকর বাবু সব সময় নিজেকে অনেক ক্ষমতাসীন মনে করতেন, কাউকে কোনো পাত্তা দিতেন না।

মনিপুর এলাকার গ্রাহক ইসমাইল হোসেন বলেন, বাড়িতে সংযোগ দেওয়ার নামে ঠিকাদারের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন শংকর বাবু। এরপরও আমি সংযোগ পাইনি। 

কড়িহলপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহীম হোসেন বলেন, আমার এলাকায় গ্যাস দেওয়ার কথা বলে, বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের ঠিকাদার আওয়ামী লীগের এক নেতা নিয়েছেন প্রায় ২ কোটি টাকার মতো কিন্তু গ্যাস সংযোগ দেননি। আমরা আজও ঠিকাদারের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। এমন অভিযোগ যেন বাখরাবাদে হাজারে হাজার। 

এদিকে বক্তব্য জানতে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সাবেক এমডি শংকর বাবুর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান এমডি আনোয়ারুল বলেন, আমি বেশিদিন হয়নি যোগদান করেছি। অনেক অবৈধ সংযোগের অভিযোগ পেয়েছি। কয়েকশ অবৈধ সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। মামলা হয়েছে। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছি।

বছরের পর বছর ফাইল পড়ে থাকার বিষয়ে বর্তমান এমডি বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম