কোনাবাড়িতে পুলিশ ঘিরে ধরে গুলি
এখনো সন্ধান মেলেনি হৃদয়ের লাশের
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ এএম
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট বিকালেও নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করে পুলিশ। এদের মধ্যে অনেকের লাশের হদিস মিলছে না এখনো। তেমনি গাজীপুরের কোনাবাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের গুলিতে নিহত কলেজছাত্র হৃদয়ের মরদেহ কোথায় জানা নেই কারো। মরদেহের কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার।
ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটি ছেলেকে ধরে রেখেছেন। পেছন থেকে আরেক পুলিশ সদস্য ছেলেটির শরীরে শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তরুণটি।
আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, গুলি করার কিছুক্ষণ পর চার পুলিশ সদস্য ছেলেটির চার হাত-পা ধরে থানার দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ওই তরুণের হদিস মেলেনি। মরদেহ কোথায় তাও জানে না কেউ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছেলেটিকে গুলি করে হত্যার পর বস্তায় ভরে মরদেহ থানার ভেতরে নিয়ে যায় পুলিশ সদস্যরা। গত ৫ আগস্ট বিকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানার পাশেই ঘটে এই ঘটনা। এদিকে ভিডিওতে পুলিশকে গুলি করতে দেখা গেলেও আসামির তালিকায় কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিকও রয়েছেন।
এ ঘটনার ২১ দিন পর গত সোমবার (২৬ আগস্ট) রাতে কোনাবাড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও চার সংবাদকর্মীসহ ৫৭ জনের নামে।
গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু যুগান্তরকে বলেন, এ মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কয়েকজন সাংবাদিককে জড়ানো হয়েছে। তিনি এ মিথ্যা অভিযোগ থেকে ওই চার সাংবাদিককে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, সাংবাদিকদের জড়িয়ে কারা মামলা দিয়েছে তা তিনি অবগত নন। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া ভালো লক্ষণ নয়। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানান।
নিহত মো. হৃদয় (২০) টাঙ্গাইলের গোপালপুরের আলম নগর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। হৃদয় হেমনগর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি কোনাবাড়ি এলাকায় বসবাস করে অটোরিকশা চালাতেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী নিহতের ফুপাতো ভাই মো. ইব্রাহীম। তিনিও পেশায় অটোরিকশা চালক। এজাহারে তিনি বলেন, আমি এবং আমার মামাতো ভাই দুইজনই গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর কোনাবাড়ী রোডে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। আমিসহ আমার মামাতো ভাই মো. হৃদয় গত ৫ আগষ্ট কুদ্দুছ নগর এঞ্জেল গেট সংলগ্ন রাস্তার ওপর অবস্থান করছিলাম। ওই সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতা কোনাবাড়ী থেকে কাশিমপুর রোডে অবস্থান নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের ওপর হামলা চালালে আমার মামাতো ভাই হৃদয় প্রাণভয়ে পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নেয়। কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্যরা হৃদয়কে দোকান থেকে জোরপূর্বক টানাহেঁচড়া করে একটি গলিতে নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা তাকে ঘেরাও করে শরীরে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। হৃদয় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং শরীর থেকে গলগলিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। পরে চার পুলিশ তার চার হাত-পা ধরে থানায় নিয়ে যায়, যা আমি ও আমার আশপাশের লোকজন ভিডিওতে ধারণ করি।
এদিকে মামলায় সমকালের কালিয়াকৈর প্রতিনিধি এম তুষারী, বাংলা টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, সকালের সময়ের কোনাবাড়ি প্রতিনিধি মোকলেছুর রহমান ও ভোরের ডাকের গাজীপুর প্রতিনিধি এম মমিন রানাকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. জিয়াউল হক বলেন, বাদী এসে মামলার এজাহার দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশকেও আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাদী এসে মামলা দেয়। এটি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না। তবে, সংবাদকর্মীদের নামে মামলা হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। তদন্ত ছাড়া অযথা কাউকে হয়রানি করা হবে না।