দর্শনা দারুস সুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০০ এএম
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা দারুস সুন্নাত সিদ্দিকীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আরিফুজ্জামান সব সময়ই অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকতে চান। তিনি ইসলামের ইতিহাস বিভাগের জুনিয়র শিক্ষক হয়েও অনেক সিনিয়রকে টপকে দীর্ঘদিন অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে মাদ্রাসার লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও তছরুপ করেছেন।
২০০৪ সালে তৎকালীন জোট সরকারের সময় অধ্যক্ষের নিকটাত্মীয় হওয়ায় পাসকোর্সের সার্টিফিকেটধারী আরিফ প্রভাষকের চাকরি পান। পরে তিনি বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসাবে মাদ্রাসা প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এ কারণে অধ্যক্ষের পদ শূন্য হওয়ার ১১ বছর পরেও এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়নি নতুন অধ্যক্ষ।
একদিকে নিয়োগ বাণিজ্য অপরদিকে মাদ্রাসার ক্লাসরুম গোডাউন হিসাবে ভাড়া দিয়ে আরিফুজ্জামান পকেটস্থ করেছেন প্রায় দুই কোটি টাকা।
৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন নতুন বিতর্কের জন্ম দেন এই আরিফুজ্জামান। ওইদিন তিনি লোহার পাইপ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সদ্য বিলুপ্ত সংসদের এমপি আলী আজগার টগরের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দেন। এই পরিচয়ে তিনি আবারও মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার আশায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।
অভিযুক্ত আরিফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ ও অভিভাবক মহল।
অভিযোগকারীরা জানান, জোট সরকারের আমলে ১৭ প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র পাসকোর্সের ডিগ্রিধারী হয়েও শিবির কোটায় প্রভাষকের চাকরি বাগিয়ে নেন। এরপর অধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নীতিমালা ভেঙে ভাইস প্রিন্সিপাল ও সিনিয়রদের টপকে দীর্ঘ সময় অধ্যক্ষের পদ দখলে রাখেন। শক্তি হিসাবে ছিলেন সাবেক এমপি আলী আজগার টগরের উপদেষ্টাখ্যাত মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী গোলাম ফারুক আরিফ। তিনি ছিলেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। তার যোগসাজশে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফুজ্জামান ১৩টি পদে প্রায় ৮০ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করেন।
এছাড়া মাদ্রাসার ক্লাসরুম গোডাউন হিসাবে ভাড়া দিয়ে পকেটস্থ করেছেন প্রায় ৮২ লাখ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ ইউসুফ আলী অবসরে যান। সেই থেকে অধ্যক্ষের পদটি শূন্য রয়েছে। আরিফুজ্জামান দুই দফায় দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ওই পদ অকড়ে ছিলেন। পরে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান মাওলানা শফী উদ্দীন। পরে গত ৬ আগস্ট আরিফুজ্জামান আবারও অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা শফী উদ্দীনকে আওয়ামী লীগ নেতা আখ্যা দিয়ে তার কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আরিফুজামান বলেন, আমি যা করেছি গভর্নিং বডির অনুমতি সাপেক্ষেই করেছি। দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ মিথ্যা।
এ বিষয়ে গত ২৭ আগস্ট তদন্তে আসেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বজলুর রশীদ। তিনি জানান তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেই সব জানা যাবে।