আশাশুনির ত্রাস ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকিম
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৫ পিএম
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সংসদ-সদস্য, মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে আর সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে অবৈধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন আশাশুনি উপজেলার সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম। ২০ আগস্ট বাড়িতে মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে যৌথ বাহিনীর অভিযানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাকিম গ্রেফতার হন। ওইদিন উপজেলার চাপড়ায় তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিদেশি ৪ বোতল মদ জব্দ করে যৌথ বাহিনী। নিজ দলের মধ্যেও বিতর্কিত ছিলেন মোস্তাকিম।
উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীকে রাজাকার বলে তিরস্কার করেন। সে কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে ঝাড়– মিছিল, মানববন্ধন ও তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
২০১৯ সালের ১৯ ফেব্র“য়ারি উপজেলার খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে তুয়ারডাঙ্গা মৎস্য সেট এলাকায় মোস্তাকিমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে উপজেলা আ.লীগ। সেই মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা ইবাদুল মোল্যার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- ইউপি সদস্য হোসেন আলী, অনুপ কুমার সানা, আরিফ বিলাহ, ইব্রাহিম হোসেন, জালাল হোসেন, রামপদ সানা, কবির হোসেন, এনামুল গাজী, আসাদুল গাজীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, মোস্তাকিমের বাবা ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। যা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। মোস্তাকিমের কার্যকলাপের নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য জেলাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মানববন্ধন শেষে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা মোস্তাকিমের কুশপুত্তলিকা দাহ ও তাকে আশাশুনিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
এছাড়া ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর বুধহাটা বাহাদুরপুর ভুবন মোহন কলেজিয়েট স্কুলে মোস্তাকিমের দুর্নীতি-অনিয়মের প্রতিবাদে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মায়েরা ঝাড়ু মিছিল করেন। অভিভাবকদের মধ্যে শাহিদা, মুক্তি, রেখা, শাবনুর, ফাতেমা, রেক্সনা, হামিদা, সন্ধ্যা, নছিমন, মিলি, হাসিনাসহ প্রায় তিনশতাধিক ছাত্রছাত্রীদের মায়েরা হাজির ছিলেন।
বিক্ষোভ মিছিলে বক্তারা বলেন, করোনার সময়ে কলেজিয়েট স্কুলের অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন মোস্তাকিম। তিনি তিন মেয়াদে ৬ বছর অ্যাডহক কমিটিতে আছেন। এছাড়া ইসমাইল, সিরাজুল ও প্রধান শিক্ষক দাউদ হোসেন ওই কমিটিতে আছেন। এই মেয়াদে ৬টি নিয়োগে ১৫ লাখ করে ৯০ লাখ টাকা আদায় করেছে কমিটি। কিন্তু এক টাকাও স্কুলের তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি। তারা লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্কুলটিকে বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন। ৮ বছর আগে যশোর বোর্ডের শীর্ষ দশে অবস্থান ছিল বিদ্যালয়টির। কিন্তু তাদের এমন দুর্নীতির কারণে সেই অবস্থান এখন আর নেই।
আশাশুনির বাসিন্দা আবু সাইদ বলেন, স্কুলের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আছে। সেখানে ১০০টিরও বেশি দোকানঘর বরাদ্দের নামে অ্যাডহক কমিটির চারজন যোগসাজশ করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। আহ্বায়ক মোস্তাকিমের নামে ৩টি, ইসমাইলের নামে ৩টি, সিরাজুলের নামে ৩টি ও প্রধান শিক্ষক দাউদ হোসেনের নামে ৩টি করে দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় স্বল্পমূল্যে। পরবর্তীতে সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করে দিয়েছেন তারা।