Logo
Logo
×

সারাদেশ

শেখ হাসিনা-কাদের-আজম-জাহাঙ্গীরসহ ৯৫ জনের নামে দুই হত্যা মামলা

Icon

আব্দুল মালেক, শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম

শেখ হাসিনা-কাদের-আজম-জাহাঙ্গীরসহ ৯৫ জনের নামে দুই হত্যা মামলা

গাজীপুরের শ্রীপুরে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা সঙ্গে বিজিবি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে বিজিবি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে ছয় আন্দোলনকারী নিহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত দুজনের স্বজনেরা হত্যা মামলা করেছেন।
বুধবার রাতে শ্রীপুর মডেল থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা করেছেন তারা।

দুই মামলাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ্ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশিদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় ২ সাবেক এমপি রুমানা আলী টুসি, ইকবাল হোসেন সবুজ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জামিল হোসেন দুর্জয়সহ  দুটি মামলায় ৯৫ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও ১ হাজার ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আন্দোলনের সময় নিহত শ্রীপুরের কপাটিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন রানার (৩৫) বাবা জামাল উদ্দিন ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানার রহমত মিয়ার (২০) বাবা মো. মুঞ্জু মিয়া মামলা দুটি করেন।

শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম সোহেল রানা মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মামলা দুটি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জামাল উদ্দিনের মামলায় উল্লিখিত কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ ৩৫ জন অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে বাদী মো. মঞ্জু মিয়ার মামলায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শ্রীপুরের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রহমত আলীর মেয়ে ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি, ছেলে শ্রীপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জামিল হাসান দুর্জয়, সাবেক এমপি ইকবাল হোসেন সবুজসহ ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০০-৬০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

দুটি মামলাতেই অভিযোগ করা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, তখন একে নস্যাৎ করার পরিকল্পনায় সরকারের নির্দেশে একাধিক বাসে করে ময়মনসিংহের বিভিন্ন ক্যাম্পে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। বাসগুলো শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পৌঁছালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখোমুখি হয়। 

পরে বিজিবি সদস্যদের আটকে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র, গুলি ছিনিয়ে নেয়। তারপর আসামিরা অতি উৎসাহী বিজিবি সদস্যদের নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালান। এতে আন্দোলনে থাকা ওই দুজন নিহত হন।

জামাল উদ্দিন তার মামলায় আরও অভিযোগ করেছেন, ৫ আগস্ট বিকাল আনুমানিক ৪টার সময় আমলার ১ থেকে ১২ নম্বর আসামির নির্দেশে ১৩ থেকে ৩৭ নম্বর আসামিরা অতিউৎসাহী বিজিবি সদস্যদের নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালান। এ সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলি আন্দোলনে থাকা জাকির হোসেনের বুকের মাঝামাঝি বিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের প্রশিকা মোড় এলাকার আল হেরা মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাকির হোসেনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মো. মুঞ্জু মিয়া তার মামলায় আরও জানান, তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গাজীপুরের শিরিরচালা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তার ছোট ছেলে রহমত মিয়া (২০) শিরিরচালা গ্রামের এসএম নিটওয়্যারস্ লিমিটেডে সুইং অপারেটর পদে চাকরি করতেন। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর ১ থেকে ১৬ নামীয় আসামিদের নির্দেশে ১৭ থেকে ৬০ ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা ৫ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র-গুলি ছিনিয়ে নেন। এর সঙ্গে নিজেদের কাছে থাকা অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালান।

এসময় আওয়ামী লীগ নেতা এজাহারনামীয় ২৬ নম্বর আসামি হারুন অর রশিদ ওরফে বাঘ বাদল ও ৪৪ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি রাসেল শেখের হাতে থাকা বিদেশি অস্ত্রের গুলি আন্দোলনে থাকা রহমত মিয়ার বুকের পাঁজরে বিদ্ধ হয়। রহমত মিয়াকে উদ্ধার করে আল হেরা মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

উভয় এজাহারে আরও বলা হয়েছে, লাশ দাফন করার পর দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতায় থানার কার্যক্রম স্থগিত ছিল। সুষ্ঠু, সঠিক ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিবাদীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম