চট্টগ্রামে বন্যায় শুধু কৃষি খাতে ক্ষতি ৩৯৪ কোটি টাকা
আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম
ফাইল ছবি
ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামে কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলা ও নগরীর আংশিক এলাকায় প্রায় ৩৯৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিরূপণ করেছে।
বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে এলাকার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বন্যায় চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে ১ লাখ ৫৩ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও চন্দনাইশ উপজেলায় ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এই সাত উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১ হাজার ৯২২ হেক্টর সবজি বাগান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ও আমন খেত। আমন ধানের উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রামে শুধু আমনের ক্ষতি হয়েছে ২৫২ কোটি টাকার মতো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ক্ষতির যে আর্থিক মূল্য নিরূপণ করেছে প্রকৃত ক্ষতি এর চেয়ে বেশিও হতে পারে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির চিত্র তুলে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন শুরু করেছেন। বুধবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে মীরসরাই উপজেলা পরিদর্শন করেছেন কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ বছরের বন্যায় কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক আমন ধানের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি আমন ক্ষেতের চিহ্ন পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। একইভাবে সবজি চাষে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় চট্টগ্রামে শুধু রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে ২৫১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ১৩ হাজার ৮৩১ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৩৭১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চলতি মাসে আউশ ধান ঘরে তোলার মৌসুম; কিন্তু ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আউশ ধানের খেত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। ফটিকছড়িতে ক্ষতির পরিমাণ ৯৯ কোটি টাকার মতো। ফটিকছড়ির পাশাপাশি মীরসরাই উপজেলায় ৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি টাকা। লোহাগাড়া উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ২ দশমিক ৫২ কোটি টাকা। সাতকানিয়া উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ২ দশমিক ৯ কোটি টাকা। সীতাকুণ্ডে ক্ষতি হয়েছে ১ দশমিক ৭ কোটি টাকা। অন্যান্য সব উপজেলায়ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলায় এবার ১ লাখ ২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় তলিয়ে গেছে ৪৩ হাজার ৫শ হেক্টর জমির ফসল। আমনের ১ লাখ ৫৫৫ হেক্টর বীজতলা। এছাড়া জেলায় ৩৩ হাজার ১ হেক্টর আউশের মধ্যে ৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া সবজি ১ হাজার ৯২২ হেক্টর এবং আদা, হলুদ, আখ ও পানের ক্ষতি হয়েছে।
ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চলতি বন্যায় জেলার ১৫টি উপজেলার মধ্যে ১১টিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হলো- ফটিকছড়ি, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, কর্ণফুলী, পটিয়া, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, রাউজান, লোহাগাড়া ও রাঙ্গুনিয়া। এর মধ্যে ফটিকছড়ি ও মীরসরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার মাঝামাঝি সময়ে ১১ উপজেলার ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিল। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। কর্ণফুলী, পটিয়া, লোহাগাড়া ও রাঙ্গুনিয়ার পানি প্রায় নেমে গেছে।
বাকি সাতটি উপজেলার ২ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। যেভাবে পানি নামছে, তাতে নতুন করে যদি ভারি বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। বন্যায় এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফটিকছড়িতে ৩ জন, হাটহাজারীতে ১ জন ও রাঙ্গুনিয়ায় ১ জন।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে কৃষিখাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বুধবারও মন্ত্রণালয়ের একটি টিম মীরসরাই উপজেলা পরিদর্শন করেছে। কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করছেন। এখনো অনেক জায়গায় পানি জমে আছে। অনেক উপজেলায় আউশ আমন ও আমনের বীজতলা ডুবে আছে। এসব এলাকা থেকে পানি সরে গেলে মাঠপর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করবেন বলে জানা গছে।
২০২৩ সালেও বন্যায় চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছিল। ১৫ উপজেলায় ৩২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বীজতলা, ৬ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, আমরা এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলা ও নগরীর আংশিক এলাকা মিলে আনুমানিক ৩৯৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছি। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ণয় করতে পারব।