Logo
Logo
×

সারাদেশ

লাশের সঙ্গে চিরকুট

‘শুকনো জায়গা পেলে কবর দেবেন’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৩২ পিএম

‘শুকনো জায়গা পেলে কবর দেবেন’

পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনী। বন্যা কেড়ে নিয়েছে সবকিছু। এর ভেতর যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বেদনার ভয়াবহতা হৃদয়বিদারক। 
সব তলিয়ে যাওয়ায় মাটির অভাবে মৃত মানুষটির দাফন বা সৎকারের সুযোগ না পেয়ে ভাসিয়ে দিতে হচ্ছে কলাগাছের ভেলায়। 

স্বজনের মরদেহ যেন একটু মাটির ছোঁয়া পায় সে আশায় অনেকে মরদেহের সঙ্গে কাগজে দাফনের অনুরোধ লিখে দিচ্ছেন। জীবনের এমনই ভয়াবহতা ছুঁয়ে যাচ্ছে ফেনীবাসীকে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে হাঁটু পানিতে একটি শিশুর (৫) মরদেহ ভেলায় ভাসতে দেখা যায়। কয়েকজন মানুষ সেই লাশটির জানাজা ও দাফনের জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু কোথায় সেটি দাফন করা হয়েছে তা আর জানা যায়নি।

রোববার ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যায় ভেসে আসে আরেকটি শিশুর লাশ।

উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা পপি মজুমদার বলেন, রোববার সকালে আমার স্বামী ডোবায় আনুমানিক পাঁচ বছরের এক শিশুর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে লোকজনকে খবর দেন। তারপর কয়েকজন ধরাধরি করে মরদেহটি এনে সড়কের পাশে রাখেন।

স্থানীয় জয়নাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটির চোখ দুটো ফুলে সাদা হয়ে ছিল। শরীর ফোলা। লাশের সঙ্গে একটি কাগজে লেখা ছিল—‘বন্যার মধ্যে মাটি না পেয়ে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কেউ লাশ পেলে যেন কবর দেওয়া হয়।’

ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক আ ন ম আব্দুর রহিম জানান, শনিবার সদর উপজেলার মৌটবী ইউনিয়নের সাতসতী গ্রামের নুরুল আলম (৬৫) মারা যান। পরে তার মরদেহ পরিবারের সদস্যরা কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেন।

একই দিন সদরের কালীদহ রেললাইনের পাশে একটি অর্ধগলিত মরদেহ ভাসতে দেখেছেন বলে জানান তিনি।

ওমানপ্রবাসী মাসুদ খান ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, তার বাবা আলীম উল্লাহ (৭৩) মারা যাওয়ার পর লাশ কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। আলীম উল্লাহ সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাতসতী গ্রামের নাছির ভূঁইয়া বাড়ির বাসিন্দা। 

শুক্রবার ভোরে মারা যান তিনি। তখন পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে থাকায় তার দাফনের ব্যবস্থা করা যায়নি।

শনিবার স্বজনরা মরদেহ কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেন। সঙ্গে একটি চিরকুটে তাকে দাফনের অনুরোধ করা হয়। সেখানে ঠিকানাও দেওয়া হয়।

ওই চিরকুটে লেখা ছিল, এই মৃতদেহটি অতিরিক্ত বন্যার কারণে আমরা দাফন করতে পারিনি। দুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে আমরা পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছি। সঙ্গে আমাদের এলাকার নাম-ঠিকানাসহ ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ শুকনো জায়গা পান, তাকে কবর দিয়ে দেবেন এবং আমাদের এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন। আপনাদের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

ফেনী সদর উপজেলার একটি গ্রামে বন্যার পানিতে মরদেহ ভাসছে উল্লেখ করে সাংবাদিক ফারাবী হাফিজ তার ফেসবুকে একটি লাশের তথ্য জানিয়ে লেখেন, কলার ভেলায় মরদেহ ভাসছে। প্লাস্টিকে লেখা, মুসলিম মহিলা। পারলে জানাজা পড়ে দিয়েন।

জানা যায়, দাফনের জন্য জায়গা না পেয়ে বানের পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় শিফু (৪২) নামের ওই নারীকে। বৃহস্পতিবার বন্যার পানিতে তলিয়ে মারা যান তিনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম