Logo
Logo
×

সারাদেশ

বেরোবিতে দোকানে আড়াই লাখ টাকা বাকি খেয়ে উধাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী-শিক্ষক

Icon

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম

বেরোবিতে দোকানে আড়াই লাখ টাকা বাকি খেয়ে উধাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী-শিক্ষক

দোকানে আড়াই লাখ টাকা বাকি খেয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের-বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক উধাও হয়েছেন। তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ হত্যায় জড়িত ও মামলার আসামি। 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের বাকির টাকা উদ্ধারে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে এখনো কাউকেই পাননি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বাকি টাকা উদ্ধারে প্রশাসন সহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন। স্থানীয় দোকানিদের এ অবস্থার কারণে ব্যবসার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে এবং তারা তাদের পাওনা টাকা ফেরত পেতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন পার্কের মোড়, পার্কের মোড় ও চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন খাবার দোকান, ভাতের হোটেল, ডেকোরেশন ও চায়ের দোকানে বাকি রেখে যাচ্ছিলেন। অনেক সময় আগের বাকি টাকা চাইলে নেতাকর্মীরা জোর করেও খেয়ে যেতেন। আবার এমনও হয়েছে যে কর্মীরা খেয়ে নেতার নাম বলে চলে গেছেন। পরে টাকা চেয়ে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এবং আওয়ামী লীগপন্থী এক শিক্ষকের কাছে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। এই তালিকায় রয়েছে অনেক সাবেক নেতাকর্মীদের নামও। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এসব নেতারা ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ায় বাকি টাকা আদায় করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন দোকানিরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবু সাঈদ হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পলাতক শিক্ষক মশিয়ার রহমান (মশিউর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন পার্কের মোড়ের দোকানগুলোতে ৭৬ হাজার ৮৭৭ টাকা বাকি খেয়েছেন। এর মধ্যে মারিয়াম প্লাজার এক দোকানে ৪০ হাজার ৪৫০, লিফা স্টোরে ৪ হাজার ৬৩০, শাহ আলম টি অ্যান্ড কফি হাউসে ৫ হাজার ৩৭৭, মাহবুব মাল্টিমিডিয়ায় ১ হাজার ৪২০ এবং চকবাজারের রুম্মান জেনারেল স্টোরে প্রায় ২৫ হাজার টাকা বাকি খেয়েছেন।

ভাই-বোন টি-স্টোরে ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ৯ হাজার ৮৩৫ এবং সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম ৮ হাজার ১৯৫ টাকাসহ মোট ১৮ হাজার ৩০ টাকা বাকি খেয়েছেন। সিনহা হোটেলে ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া ৬৫০ টাকা, সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম ৫৫০ টাকা, শাহ আলম টি অ্যান্ড কফি হাউসে সাবেক সভাপতি তুষার কিবরিয়া ৫ হাজার ৩১১৯ এবং পোমেল বড়ুয়া ৬ হাজার ৭৩৮ টাকাসহ মোট ৫৯ হাজার ৮৫৭ টাকার বাকি খেয়েছেন। 

ছাত্রলীগ নেতা মামুন সবুজ ১ হাজার ৩০০ টাকা, বাঁধন ৫৫০ টাকা, আক্তার ১ হাজার ২৯৫ টাকা, আরিফ ২ হাজার টাকা, আল আমিন ৪ হাজার ৬৮৩ টাকা এবং শুভ ১ হাজার ৫০০ টাকাসহ মোট ১২ হাজার ৫২৮ টাকা বিভিন্ন দোকানে বাকি খেয়েছেন। 

আনোয়ার হোসেন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে ছাত্রলীগ নেতা কনক ২ হাজার ৬৫৫ টাকা এবং পলক চাকমা ৭৭৫ টাকাসহ নেতাকর্মীরা মিলে সর্বমোট ১১ হাজার ৯০৫ টাকা বাকি খেয়েছেন। 

ঢাকা তেহারি হাউসে ছাত্রলীগ নেতা সিটন ১ হাজার ৪৮০ টাকার বাকি খায়। জয়া ডেকোরেশনের দোকান থেকে সাবেক ছাত্রলীগ সম্পাদক মাহমুদ ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ২ হাজার ২০০ টাকাসহ মোট ৬ হাজার ৭০০ টাকা বাকি রেখেছেন। 

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছোট ছোট চা স্টলগুলো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকার মতো বকেয়া পাবেন বলে জানান।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখতার ইলাহী হলের ডাইনিং ম্যানেজার জুয়েল হোসেন কত টাকা পায় তা বলতে না পারলেও বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিং ম্যানেজার দৌলত মিয়া সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে ৫২ হাজার টাকা পাবে বলে জানান।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দোকানিদের অভিযোগ, তারা ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ যাদের কাছে বাকি টাকা পান তাদের টাকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তারা দেই দিচ্ছি বলে দেননি। অনেকেই কল ধরছে না আবার মোবাইল বন্ধ। আমরা চাই, আমাদের টাকা যাতে ফেরত দিয়ে যায়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের বাকির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো দোকানির অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। তবে এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় ভেতরের হলে ভালো হতো বলে তিনি জানান। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম