সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বাহাউদ্দীন বাহার ও মেয়ে সূচনা
ইকবাল হোসেন সুমন, বুড়িচং (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৪৯ পিএম
কুমিল্লার সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে সাবেক কুসিক মেয়র ডা. তাহসিন বাহার সূচনা।
গাড়ি, বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট—কী নেই কুমিল্লার সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে সাবেক কুসিক মেয়র ডা. তাহসিন বাহার সূচনার। রীতিমতো গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। বাহার শুধু নিজের নামেই নয়, স্ত্রী, মেয়ে, মেয়ের জামাই, ভাই-ভাতিজার নামে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পত্তি।
অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্য থাকাকালে টেন্ডারবাজি, গোমতী নদীর মাটি কাটা, কুমিল্লা পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন এসব সম্পদ।
আরও অভিযোগ রয়েছে- তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে করা হতো অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন। তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষ।
নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক বাহার রায়হান। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারসহ তার গুন্ডাবাহিনীর ৬০ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা দায়ের করেছেন সাংবাদিক বাহার রায়হান। তার বিপুল সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক কমিশনার।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে বাহার ও তার মেয়ের বিপুল সম্পদের সত্যতা মিলেছে। ঢাকা উত্তরায় বাহার ও তার মেয়ে এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। সিঙ্গাপুরে কিনেছেন ২টি বাড়ি, স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে রয়েছে ১ হাজার ভরি স্বর্ণালংকার। কুমিল্লা চলতো তার ইশারায়। ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে গোমতী নদীর মাটি কাটা পর্যন্ত। ১ হাজার গুন্ডা-পান্ডা এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। কেউ কিছু বলার সাহস পেত না। কেউ গোমতী নদী মাটি কাটা সাবাড় করতে বাধা দিলে চলত অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন।
পরিবেশ বন অধিদপ্তরের এক নারী কর্মকর্তাকেও দিয়েছিলেন হত্যার হুমকি। তার গুন্ডা-পান্ডারা কুমিল্লা ক্লাবকে টর্চার ক্লাবে পরিণত করেছিলেন। সরকার পতনের পর তার এই প্রিয় ক্লাব পুড়িয়ে দিয়েছেন ছাত্র-জনতা।
বিলাসবহুল গাড়ি ছাড়া কখনো চলাফেরা করতেন না বাহার। কোটি টাকা মূল্যের রয়েছে তার ৪টি গাড়ি। তার তিন মেয়ে চলাফেরা করতেন কোটি টাকার গাড়িতে। তিন মেয়ের ৩টা গাড়ি। স্ত্রীর নামেও রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি ও ফ্ল্যাট।
সরকার পতনের পর কুমিল্লার এই সংসদ সদস্য ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সাবেক মেয়রকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা সপরিবারে বিদেশে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরকার পতনের পর আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বাসভবনে আগুন দিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার নিজ বাসভবন মুনসেফ দোতলা বাড়ি।
ক্ষমতায় থাকাকালীন কুমিল্লা-৬ আসন ছাড়াও নিয়ন্ত্রণ করতেন অন্য এলাকা। তিনি যার দিকে ইশারা করতেন তিনি নাকি হয়ে যেতেন জাতীয় সংসদের সদস্য। তার গুন্ডাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রচার প্রচারণা চালাতেন।
অভিযোগ রয়েছে কুমিল্লায় তার ইশারায় এমপি হয়েছেন কুমিল্লা-৪ থেকে আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-৫ থেকে আবু জাহের, চান্দিনায় ডাক্তার প্রাণ গোপাল শেখ হাসিনার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক; কুমিল্লা-৩ আসনের এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অনেকের কাছ থেকে। কুমিল্লা জেলার মানুষ তার ও তার গুন্ডাবাহিনীর ভয়ে আতঙ্কিত থাকতেন নির্বাচনের সময়। যে যেভাবে পারছেন লুটপাট করেছেন এই কুমিল্লাকে। আর এসবের নেতৃত্ব দিয়েছেন আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার- এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তার পরিবারের সবাই লাপাত্তা। তাদের সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। তাদের ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।