পুলিশের গুলিতে পঙ্গু অটোরিকশা চালকের মানবেতর জীবন যাপন
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৫ পিএম
কোটা সংস্কার ইস্যুতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকায় অটোরিকশা মিছিলে অংশ নেওয়া শাহিনুর হোসেন (৪০) পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করলেও কেউ তার খোঁজ রাখেনি।
৭ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম অসহায় শাহিনুর হোসেন (৪০) এখন চিকিৎসাহীন অবস্থায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের রত্নেশ্বরপুর গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। চিকিৎসার অর্থ সংকটসহ পরিবার নিয়ে করছেন মানবেতর জীবন যাপন। সে ওই গ্রামের মৃত গোলজার হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে গত ২০ জুলাই শাহিনুর হোসেন সহ প্রায় দেড় শতাধিক অটোরিকশা চালক মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি ঢাকার শনির আখড়ায় পৌঁছালে পুলিশ বাঁধা দেয়। পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে সামনে এগুতেই এলোপাতাড়ি গুলি। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে আর কিছুই মনে নেই তার।
অশ্রুসিক্ত চোখে শাহিনুর বলেন, আমাদের কয়েকজন ওইদিন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। আমাকেও মরা ভেবে কেউ নিতে আসেননি। কিন্তু মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষে ফেরার পথে কয়েকজন মুসল্লি আমার নড়াচড়া দেখে স্থানীয় দুটি মেডিকেলে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়। ওই সময় আমার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
পরে ওই অজ্ঞাতনামা মুসল্লিগণ আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করান। গুলিটা আমার বাম ঘাড়ের নিচে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সাত ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে আমাকে। আমি এখনও জোরে কথা বলতে কিংবা হাঁটাচলা করতে পারছি না। আমার চিকিৎসার জন্য পরিবারের লোকজন অনেক টাকা ধার-কর্জ করেছে, এ টাকা পরিশোধ করবো কেমনে- বলতে বলতেই আবারও ভেঙ্গে পড়েন শাহিনুর।
আপনারা অটোরিকশা চালক হয়ে আন্দোলনে যোগ দিলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে আক্ষেপ করে শাহিনুর হোসেন বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা (ছাত্র-ছাত্রী) অধিকার আদায়ে রাস্তায় গুলি খেয়ে মরছে, আমরা তা মানতে পারি! ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহমত জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম।
শাহিনুরের মা রাজেকা খাতুন বলেন, হামার একনা নাতি পাভেল হোসেন ওটাও মানুষিক ভারসাম্যহীন। কখন কি করে ওকে সামলানোয় দায়। জায়গা-জমিও নাই। নাতনি দুটো জীবিকার সন্ধানে অল্প বয়সে গার্মেন্টসে চাকরি করে। নাতী-নাতনী, বৌ, বেটা মিলে ৭ সদস্যের সংসার কিভাবে চলবে? পঙ্গু হয়া এলা নিজে বাঁচবে নাকি সংসার বাঁচাবে!