বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, ৪৪৩ আ.লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুই মামলা
যুগান্তর প্রতিবেদন, আমতলী (বরগুনা)
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম
ফাইল ছবি
বরগুনার আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমানকে প্রধান আসামি করে সাত ইউপি চেয়ারম্যান সহ ৯৩ জনের নামে এবং আরো ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মোট ৪৪৩ জনের বিরুদ্ধে একই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সোয়েব ইসলাম হেলাল ও পৌর যুবদল সভাপতি জাকির হাওলাদার বাদী হয়ে যথাক্রমে ৫৫ জন, ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় শুক্রবার রাতে পৃথক দুটি মামলা করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট দুপুর পৌনে ১টার দিকে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিএম ওসমানী হাসানের নেতৃত্বে সাড়ে চার শতাধিক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী আমতলী উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর চালায়। এ সময় তারা (আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা) অফিসের আসবাবপত্র তছনছ করে।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে পৃথক দুটি মামলা করেন আমতলী উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সোয়েব ইসলাম হেলাল এবং জাকির হাওলাদার।
এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক জিএম ওসমানী হাসান, সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র নাজমুল আহসান নান্নু, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন, গুলিশাখালী ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনি, আঠারোগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন, কুকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার, হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক, চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাদল খাঁন, আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা, আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেলী পারভীন মালা ও আঠারোগাছিয়া যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৯৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৩৫০ জনসহ মোট ৪৪৩ জনকে আসামি করা হয়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, দুটি মামলায়ই বিএনপি দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নয় এমন ইউপি চেয়ারম্যান ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
মামলার আসামি সোহেল রানা বলেন, বিএনপি অফিস ভাঙচুর তো দূরের কথা, আমি অফিসই চিনি না। কিন্তু আমাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ হয়রানিমূলক মামলা থেকে দ্রুত অব্যাহতির দাবি জানান তিনি।
আঠারোগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, আমি ঘটনার তিন দিন আগে থেকে পটুয়াখালীর বাসায় ছিলাম। কিন্তু আমাকে অহেতুক মামলায় জড়ানো হয়েছে। দ্রুত এ মামলা থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন মাসুম মাসুম তালুকদার বলেন, বিএনপি অফিস ভাঙচুরের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। কিন্তু আমাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ হয়রানিমূলক মামলা থেকে আমাকে দ্রুত অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বিএনপি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা দুটি করা হয়েছে বলে জানান, এ দুই মামলার বাদী উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সোয়েব ইসলাম হেলাল ও পৌর যুবদল সভাপতি জাকির হাওলাদার।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিএম ওসমানী হাসানের নেতৃত্বে সাড়ে চার শতাধিক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেছে এবং অফিসের মালামাল তছনছ করেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জিএম ওসমানী হাসান বলেন, একই ঘটনায় দুটি আলাদা মামলা হয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় মামলা মিথ্যা। নেতাকর্মীদের অহেতুক হয়রানি করতেই এ মামলা দেওয়া হয়েছে।
আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, ওই অফিস আমরা ভাঙচুর করিনি। উল্টো বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ অফিস দখল করে নিয়েছে। হয়রানি করতেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, একই ঘটনায় দুটি মামলায় ৯৩ জন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং ৩৫০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।