Logo
Logo
×

সারাদেশ

কমলনগর-রামগতির ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

Icon

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি  

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

কমলনগর-রামগতির ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতির বিস্তীর্ণ এলাকা ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় পরিণত  হয়েছে। দুই উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে বেড়িবাঁধ এলাকার পূর্ব পাশের কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা, তোরাবগঞ্জ, চর লরেন্স ও রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা, চর বাদাম, চর রমিজ এবং বড়খেরী এই সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার অনেক বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। 

জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাকসবজির মাঠ। মাঠে পানি বেশি থাকায় কৃষক আমন ধান লাগাতে পারছেন না। বাসাবাড়িতে হাঁটু ও কোমরসমান পানি জমে আছে। পানি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্মআয়ের মানুষসহ মৎস্যচাষিরা। ইতোমধ্যেই অনেক মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। 

পশুখাদ্যেও দেখা দিয়েছে চরম সংকট। অনেকে গবাদিপশু নিয়ে নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায়  বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাজুড়ে। ভয়াবহ এ মানবিক বিপর্যয়ে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয়। 

পানিবন্দি পরিবারগুলোর অভিযোগ,  এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম ভুলুয়া নদীতে একশ্রেণির প্রভাবশালীরা বাঁধ দিয়ে দখল করে রাখার কারণে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার আন্ডারচর ইউনিয়নের বাসিন্দারাও।এ অবস্থায় দখল হওয়া ভুলুয়া নদীর বাঁধ অপসারণ করার জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা গ্রাম রামগতি উপজেলার চরবাদাম ও চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন ঘুরে পানিবন্দি বাসিন্দাদের দুর্দশার এ চিত্র দেখা গেছে।

পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে খাল-বিল মুক্তকরণসহ অবৈধ বাঁধ অপসারণ করলেই জলাবদ্ধতা রোধ হবে। এর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

এ সময় দেখা যায়, ভুলুয়া নদীতে পানি থৈ থৈ করছে। যদিও শুকনো মৌসুমে এ নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় কোনো পানি দেখা যায়নি। বৃষ্টির পানি জমে ভুলুয়া এখন পানিতে টইটম্বুর হয়ে আছে । একইসঙ্গে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাও ডুবে আছে বৃষ্টির পানিতে। অধিকাংশ বাড়িতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। আবার অনেক বাড়িতে কোমর পরিমাণ পানি,  ঘরেও ঢুকে পড়েছে পানি। অনেকে উঁচু স্থানের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। 

কমলনগরের বাদামতলী এলাকার  মৎস্য চাষী সিরাজুল ইসলাম মেম্বার যুগান্তরকে বলেন, দুই একর জমির দুটি ঘেরে এনজিও থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে রুই কাতলা তেলাপিয়াসহ নানা প্রজাতির মাছের চাষ করেছেন। বৃষ্টিতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘেরের সব মাছ চলে গেছে। এমন ক্ষতিতে দু'চোখে এখন অন্ধকার দেখছেন তিনি।

চর লরেন্স এলাকার গরুর খামারী ওমর ফারুকের কপালেও একই ধরনের চিন্তার ভাঁজ। তিনি জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পুরো এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তার বাড়িতে কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে।  গোয়ালঘরেও ঢুকেছে পানি। এমন সংকটে ১২টি গরুর গোখাদ্য ও পরিচর্যা নিয়ে চরম বেকায়দায় রয়েছেন তিনি। 

এদিকে রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে । যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। ঘরছাড়া রয়েছেন ওই এলাকার কয়েকশ পরিবার। পানিবন্দি এসব এলাকায় মাটির চুলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়  গত কয়েকদিন ধরে চলছে না রান্না-বান্না। চুলায় জ্বলছে না আগুন। শুকনো খাবার খেয়ে কোনোভাবে বেঁচে থাকার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা ।

জয়নাল আবেদীন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ১৫ দিন ধরে আমরা খুব কষ্টে আছি। চারপাশের পানিতে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। গবাদিপশু নিয়ে চরম বেকায়দায় আছি।

চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, প্রায় ১৫ দিন ধরেই আমার এলাকার বহু মানুষ পানিবন্দি। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। সরকারি ও বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন শুকনো খাবার বিতরণ করেছে। এমতাবস্থায় পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকারি উদ্যোগ খুবই জরুরি বলে জানান তিনি। 

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, পানিবন্দি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ভুলুয়া নদীর বাঁধ অপসারণ ও বিভিন্ন খালের বাঁধ অপসারণ করে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হচ্ছে। 

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নদীতে ভাটা আসলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সার্বক্ষণিক আমাদের কর্মীরা পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সবগুলো স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। 

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলায় জলাবদ্ধতায় প্রায় ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) থেকে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৮৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। খালগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। এতে পানি নামতে পারছে না। জনগণ আমাদেরকে এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। প্রশাসনের উপস্থিতি ও জনগণের সহযোগিতায় অবৈধ বাঁধগুলো কেটে দেওয়া হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম