Logo
Logo
×

সারাদেশ

গৌরীপুরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৩ জনের লাশ দাফন, বিচার নিয়ে শঙ্কা

Icon

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩০ পিএম

গৌরীপুরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৩ জনের লাশ দাফন, বিচার নিয়ে শঙ্কা

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া বাজারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩ জন নিহত হন। ঘটনার পরপরই ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৩ জনের লাশ দাফন করে পরিবার। 

নিহতরা হলেন- উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের চুড়ালী গ্রামের মো. বাবুল মিয়ার পুত্র বিপ্লব হাসান, মইলাকান্দা ইউনিয়নের পূর্বকাউরাট গ্রামের জোবায়ের আহম্মেদ ও রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামের নুরে আলম সিদ্দিকী রাকিব। 

এছাড়াও আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ছাত্র-জনতা ও পুলিশসহ উভয়পক্ষের প্রায় ৩০ জন আহত হন। গত ২০ জুলাই এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত জোবায়ের আহম্মেদের পিতা মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিন বলেন, অসুস্থ হওয়ার খবর শুনে যখন আমরা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজিয়ে জোবায়েদের বন্ধুরা লাশ নিয়ে আসে। পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তখন ময়নাতদন্ত করে নাই। 

নিহত বিপ্লব হাসানের বাবা মো. বাবুল মিয়া বলেন, আমি সিলেট গিয়েছিলাম। বাড়িতে এসে দেখি আমার ছেলের লাশ। হাসপাতালের লোকজন ছেলের বন্ধুদের হাতেই লাশ দিয়ে দিয়েছে। ময়নাতদন্তের উদ্যোগ তখন প্রশাসন নেয়নি বা কেনো ময়নাতদন্ত হইছে কিনা সেটাও জানি না। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বাহালুল মুনসী যুগান্তরকে জানান, ফ্যাসিস্ট খুনি সরকার চেয়েছিল শহিদ ভাইদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আড়াল করতে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের যেন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না হয়, নিহতদের পরিবার যেন কখনও বিচার দাবি না করতে পারে, সে জন্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দিয়ে দিয়েছে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শামছুজ্জামান দুর্জয় জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করায় তাদের বিচার নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তবে আমার শহিদ ভাইদের বিচারের জন্য শুধু ময়নাতদন্ত নয়, যা করার দরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকিছু করতে চাই।

এ তিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গৌরীপুর থানার এসআই মো. শফিকুল আলম বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২৩ জুলাই এ মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এ মামলায় কারও নাম নেই। 

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিহতদের ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত যখন আদেশ দেবেন, তখনই ময়নাতদন্ত করা হবে। 

এদিকে পুলিশের রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে গৌরীপুর থানার পুলিশ কনস্টেবল (কং ১২৬৫) মো. ছামিউল হক ৩১ রাউন্ড কার্তুজ, (কং ২১২৯) আবুল বাশার খান ১৯ রাউন্ড কার্তুজ ও গুলি, (কং ১০৬৬) মো. মনিরুজ্জামান ১২ রাউন্ড, (কং ১৩৭৯) মো. আনোয়ার হোসেন ১১ রাউন্ড, (কং ১৭৯১) আব্দুল মালেক ১২ রাউন্ড, (কং ৮৩৫) মো. মবিনুর রহমান খান ৫ রাউন্ড কার্তুজ ও গুলি, (কং ১৫৭১) ওয়াজকুরনী ৫ রাউন্ড, (কং ১৩৫৬) মো. শামীম আহাম্মেদ ১০ রাউন্ড কার্তুজ-গুলি, এসআই শফিকুল আলম ৭.৬২ চায়না রাইফেল থেকে ৫ রাউন্ড, (কং ১১৩২) মো. মোকলেছুর রহমান চায়না ৭.৬২ রাইফেল থেকে ৫ রাউন্ড ও (কং ২১৫৮) শফিকুল ইসলাম ৭.৬২ চায়না রাইফেল থেকে এক রাউন্ডসহ ১১৬ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। 

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গৌরীপুর থানার ওসি সুমন চন্দ্র রায়, গৌরীপুর থানার এসআই শফিকুল আলম, অনিক ইসলাম, মোস্তাক আহমেদ, সহকারী এসআই দেলোয়ার হোসেন, শাহিনুল বারী, কনস্টেবল শামীম হোসেন, ওয়াজকুরনী, মোখলেছুর রহমান, মনির হোসেন, গাড়ির চালক মিন্টু, জাবেদসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়। 

একই সময়ে পুলিশের গুলিতে গৌরীপুর পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মুনশীর ছেলে বাহালুল মুনশী, গৌরীপুর সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ফারুক আহম্মেদ নিলয়, রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামের সোহেল রানা, গুজিখাঁ গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মো. জুনায়েদ আহমেদ, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রাইসুল আহমেদ সজীব, গৌরীপুর সরকারি কলেজ অনার্সের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান মানিক, রামগোপালপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল ইসলাম মনজু, পুম্বাইল গ্রামের ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসাইন লাদেন ও তাঁতকুড়া গ্রামের মো. সুমন মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। তাদের অনেকেরই চোখের দৃষ্টি হারিয়ে গেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম