Logo
Logo
×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সড়ক মহাসড়কে থৈ থৈ পানি

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৮:২২ পিএম

চট্টগ্রামে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সড়ক মহাসড়কে থৈ থৈ পানি

একটানা ভারি বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সড়ক মহাসড়কের ওপর দিয়ে নদীর স্রোতের মতো প্রবাহিত হয়েছে পানি। নিচু এলাকার বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোমর সমান আবার কোথাও গলা সমান পানিতে তলিয়ে যায় এলাকা। বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এক টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। 

সকালে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা রাস্তায় বেরিয়ে বিপাকে পড়েন। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল ছিল বন্ধ। নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি দোকানপাটও পানিতে একাকার। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সবাই। এদিকে ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

নগরী ছাড়াও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, আনোয়ারাসহ কয়েকটি উপকূলীয় উপজেলা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৫৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হওয়ায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পরবর্তী ২৪ ঘন্টা মাঝারি থেকে ভারী কিংবা অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের জন্য তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদীবন্দরের জন্য এক নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার ভয়াবহ জলাবদ্ধতার ছবিতে ছেয়ে গেছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অনেকে জলাবদ্ধতার ছবি পোস্ট করে দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন।

ভারী বর্ষণে হালিশহর, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়ার ডিসি রোড, পশ্চিম খুলশি, রিয়াজউদ্দিন বাজার তিন পুলের মাথাসহ বিভিন্ন এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। চকবাজারের কাঁচা বাজার থেকে ধনির পুল পর্যন্ত, পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের সামনে কোমর পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের সামনে কোমর সমান পানি থাকায় অনেক সেবাপ্রার্থী অফিসটিতে প্রবেশ করতে পারেনি। 

মুরাদপুর সড়কে পানি প্রবাহিত হওয়ায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার দিয়ে যানবাহন চলাচলের চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্লাইওভারের দুই প্রান্ত বহদ্দারহাট ও লালখানবাজারে যানজটে শত শত গাড়ি আটকে যায়। এ সময় নগরীতে গণপরিবহণ সংকটও দেখা দেয়। বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর এলাকায় পানি ডিঙিয়ে হেঁটে অনেককে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। পানি এড়াতে অনেকে আবার ফ্লাইওভারে উঠে হেঁটে চলাচল করেন। গণপরিবহণের অভাবে যাতায়াতের প্রধান অবলম্বন হয়ে ওঠে রিকশা। সুযোগ বুঝে তিন-চারগুণ বেশি ভাড়া নিয়েছেন রিকশা চালকরা।

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, সারারাত প্রচুর বৃষ্টিপাতে পুরো চকবাজার পানিতে থৈ থৈ করছে। আমার বাসার নিচেই কোমর সমান পানি। আজ কর্মস্থলে যেতে পারিনি। এখন ঘরে বসেই বৃষ্টি দেখছি। যাদের বাসা নিচতলায় তাদের বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। তারা সেচে কোনোমতে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছে।’ জলাবদ্ধতার কারণে অনেক সকালে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নোটিশ দিয়ে বন্ধ করা হয়। তবে অভিভাবকরা জানতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন। 

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এর কারণেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে। ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম