Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘আমার ছেলেকে কেন গাড়ি চাপা দিয়া মারল’

Icon

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪০ পিএম

‘আমার ছেলেকে কেন গাড়ি চাপা দিয়া মারল’

শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের সময় গাড়ি চাপায় নিহত মাহবুব আলমের মা ও স্বজনদের কান্না আর আহাজারি থামছেই না। ‘আমার ছেলে তো কোনো অপরাধ করে নাই। কেন তারে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চালক চাপা দিয়ে মারল। আমি আমার প্রাণের টুকরা ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ 

শনিবার বিকালে নিহত মাহবুব আলমের মা মাফুজা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে একথাগুলো বলেন। ৪ আগস্ট বিকালে শেরপুর শহরের নতুন আইডিয়াল স্কুলের সামনের সড়কে মিছিলে গুলিবর্ষণের একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা প্রাণভয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বহনকারী একটি সাদা পিকআপ দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে যাওয়ার সময় নিচে চাপা পড়ে মাহবুব আলম নিহত হন। শেরপুর সদর উপজেলার তারাগড় কান্দাপাড়া গ্রামের মিরাজ আলী ও মাফুজা খাতুন দম্পতির ছেলে মাহবুব আলম (২০)। 

নিহত মাহবুব পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। মাহবুবের বাবা মিরাজ আলী ১৭-১৮ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তার মা মাফুজা গৃহিণী। তারাগড় কান্দাপাড়া গ্রামে আট শতাংশ জমির বসতভিটা ছাড়া তার বাবার আর কোনো ফসলি জমি নেই। বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ছেলে মাহবুব নিহত হলেও তার মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই। পরিবারের সদস্যরা জানান, বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ছেলের জানাজায়ও শরিক হননি। 

নিহত মাহবুব আলমের মা মাফুজা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘অনেক কষ্ট কইরা পোলাপানগোরে মানুষ করছি। স্বামী থাকলেও মানসিক ভারসাম্যহীন। আমি প্রথমে তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ কইরা পরে বিড়ি বাইন্দা, হাঁস-মুরগি ও গরু পাইল্লা পোলাপানগোরে ডাঙর কইরা এই পর্যন্ত আইছি। বাড়িতে একটিমাত্র টিনের ঘরেই আমাদের বসবাস। মাহবুব পড়ালেহার পাশাপাশি কম্পিউটার ট্রেনিং কইরা, টিউশিনি কইরা নিজের খরচ চালাইত এবং সংসারের খরচ দিত। ছেলেডা (মাহবুব) মরার কিছুদিন আগে আমারে কইছে আমরা অহন বড় অইছি। কামাই-রোজগার করতাছি। তোমার আর গরু পাইল্লা কষ্ট করন লাগবো না। মা তোমারে একটা ঘর কইরা দিমু। এক মাস আগে ঘর করার লাইগা সাড়ে চার হাজার ইট কিন্না আইনা বাড়িত রাখছে। কিন্তু তার মনের আশা আর পূরণ হইল না। আন্দোলন করতে গিয়া ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির তলে পইড়া ও মইরা গেল। আমি আমার ছেলে মাহবুব হত্যার বিচার চাইয়া বাদী হইয়া থানায় মামলা করছি। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করে নাই। কেন তারে গাড়ি চাপা দিয়া মারল। যারা আমার ছেলেরে মারছে, আমি তাদের বিচার ও শাস্তি চাই।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম