শহিদ আবু সাঈদকে ‘জাতীয় বীর’ স্বীকৃতির দাবি
তাহাম্মেল হোসেন সবুজ, মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে ‘জাতীয় বীর’ স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে পরিবার।
হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া মেধাবী এই শিক্ষার্থী দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করায় তাকে এই স্বীকৃতি দানে সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাড়িতে যান। সেখানে তিনি আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের সপ্তম সন্তান আবু সাঈদ। ২ মায়ের সংসারে মোট ৯ ভাই-বোন। বাবা মকবুল হোসেন হতদরিদ্র কৃষক। স্থানীয়ভাবে বর্গাচাষ করে চলে তার সংসার। আবু সাঈদের বড় মায়ের ঘরে ৩ ভাই ও ১ বোন রয়েছে। ছোট মায়ের সংসারে রয়েছে আবু সাঈদসহ ৩ ভাই ২ বোন। এরমধ্যে আবু রায়হান নামে এক ভাই মানসিক প্রতিবন্ধী। পুরো পরিবারের একমাত্র মেধাবী ছিল আবু সাঈদ। তাই তাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আশা-আকাঙ্খা ছিল পাহাড় সমান।
আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন (৩৫) বলেন, দেশের জন্য আমার ভাই জীবন উৎসর্গ করেছে। এজন্য আমরা গর্বিত। কিন্তু আমাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেটি কোনকিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতা আবু সাঈদকে যেন মনে রাখে। এজন্য আবু সাঈদকে ‘জাতীয় রীব’ স্বীকৃতি চাই।
চাচা মনজুর হোসেন (৬৫) বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করার জন্য এসেছেন। এর আগেও অনেকে এসেছে। তারা আমাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কিছুদিন পর সব স্বাভাবিক হলে আবু সাঈদকে সবাই ভুলে যেতে পারে। তাই সরকারি ভাবে তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ করছি।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে আবু সাঈদের গ্রাম জাফরপাড়া। পীরগঞ্জ-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক হতে আধা কিলোমিটার উত্তরে তার বাড়িটি। বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটি দিয়ে তৈরি ঘরগুলো। গাছ-গাছালি দিয়ে ঘেরা গ্রামটিতে খুব বেশি উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। পুরো গ্রামটিতে কাঁচা ও আধা পাকা বাড়িঘর। বেশিরভাগ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি পর্যাপ্ত শিক্ষার আলো। কৃষি নির্ভর গ্রামটির উজ্বল নক্ষত্র ছিলেন আবু সাঈদ। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিল গ্রামবাসী।
আবু সাঈদের চাচি জোসনা বেগম (৬০) বলেন, আবু সাঈদকে নিয়ে আমাদের খুব আশা ছিল। সে ভালো কিছু করবে, এলাকার মানুষের মুখ উজ্বল হবে। সে করেছে ঠিকই, তবে জীবন উৎসর্গ করে। দেশের মানুষ তাকে দীর্ঘদিন স্মরণে রাখুক এটাই চাই। এজন্য বর্তমান সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।