Logo
Logo
×

সারাদেশ

ফেসবুকে গুজব, ভারতীয় কাঁটাতারের কাছে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ

Icon

মিজানুর রহমান দুলাল, লালমনিরহাট

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম

ফেসবুকে গুজব, ভারতীয় কাঁটাতারের কাছে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ

ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তের ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার কাছে জড়ো করা হয়েছে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে।

শুক্রবার সকাল থেকে জড়ো হওয়া সিংহভাগ মানুষজনই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, ভারতীয় নেতারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসবেন, বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন- এমন মেসেজ পেয়ে তারা এসেছেন।

অন্যদিকে কেউ কেউ আবার বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ জানিয়েছেন উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে।

শুক্রবার সকাল থেকেই এসব মানুষজন জড়ো হয়েছেন জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারী ভারতীয় কাঁটাতার লাগোয়া শ্মশানঘাট এলাকায়। যেখান থেকে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর শ্বশুরবাড়ি মাত্র কয়েকশ গজ অদূরে। তিনি গত ৫ আগস্ট বিকাল থেকেই তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি কিছুদিন আগে হাতীবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-অভিভাবকসহ প্রায় ৯০ জনের নামে দায়ের করা মামলার বাদীও তিনি। সরকার পতনের পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে বাচ্চুর বিরুদ্ধে।

এদিকে খবর পেয়ে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিএনপি জামায়াতের নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে ঘরে ফেরার আহবান জানান কিন্তু শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত সামান্য সংখ্যক লোকজন ফিরলেও হাজার হাজার মানুষকে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার পাশেই জড়ো হয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ভারতে ঢোকার চেষ্টা করলেও বিএসএফ তাদের বাধা দেয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত গোতামারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও হাতীবান্ধা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) একটা স্ট্যাটাস দেখলাম। সেখানে লেখা ছিল- আপনারা উত্তর গোতামারী শ্মশানঘাটে আসেন এখানে মিটিং হবে। ফেসবুকের এই স্ট্যাটাসের কারণেই সকাল থেকে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে এখানে এসেছেন বলে মনে হচ্ছে।

শুক্রবার দিনভর সেখানে জড়ো হওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের ভিড় সামলাতে বিজিবি ও পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা সনজিত বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি হাজার হাজার লোক আমাদের এই সীমান্তে ভারতীয় কাঁটাতারের কাছে জড়ো হয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম- ভারতকে জানানোর জন্য তারা এখানে সমবেত হয়েছেন। তবে গোতামারীসহ আশপাশের এলাকায় কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘর কিংবা মন্দিরের কোনো প্রকার ক্ষতি কেউ করেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে সেখানে জড়ো হওয়া কয়েকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ অভিযোগ করে বলেন, তাদের বাড়ি একটু দূরে। গত ৫ আগস্ট রাতে কিছু দুর্বৃত্ত তাদের কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা থেকে আসা পরশ চন্দ্র জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি জানতে পেয়েছেন যে হাতীবান্ধার উত্তর গোতামারী শ্মশানঘাটে ভারতীয় নেতারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসবেন, বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন। তাই তিনিও সেখানে এসেছেন বলে উল্লেখ করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরব থাকা হাতীবান্ধার স্কুলশিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক রুবেল যুগান্তরকে বলেন, আমরা শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি অটুট রাখার লক্ষ্যে সংগ্রাম করছি। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান ও হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চু নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি উত্তর গোতামারী এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনিই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই এমন কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে মনে করি।

এ নিয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, আমি তাদের (হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন) সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নির্দিষ্ট করে তাদের কোনো অভিযোগ বলতে পারছেন না। আবার কেউ বলছে তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সব মিলে আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম