গাজীপুর কালিয়াকৈর শ্রীপুরে নিহত ৯, আহত শতাধিক
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৪, ১০:৩০ পিএম
গাজীপুরের শ্রীপুরে বিজিপির সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন ও গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানায় পুলিশের গুলিতে একজন ও কালিয়াকৈরে আনসার সদস্যদের গুলিতে দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
এতে অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় শ্রীপুরে বিজিবির তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ বিভাগে নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের নিয়ে কয়েকটি বাস ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে ঢাকায় যাচ্ছিল। বাসগুলো মহাসড়কের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় গেলে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা আটকে দেয়। দুটি বাসে থাকা প্রায় ৮০ জন বিজিবি সদস্যদের মুলাইদ এলাকার বাংলাদেশ ফিলিং স্টেশনের সামনে আটকে দেয়।
এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা তাদের ভারতীয় পুলিশ বা বিএসএফ সদস্য ও তারা হিন্দি কথা বলে প্রচার দেয়। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যের কাছে থাকা অস্ত্রসহ গোলাবারুদ আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা বস্তায় ভরে তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার একপর্যায়ে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতা বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করে।
দুপুর থেকে কয়েক ধাপে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় আন্দোলনকারী ও উৎসুক জনতা ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অবরুদ্ধ থাকার খবর পেয়ে আশপাশের ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিজিবি সদস্যদের উদ্ধারে কাজ করে, তারা আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মৃত আসাদের ছেলে সিফাতউল্লাহ (২২), শ্রীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের দারগারচালা গ্রামের শুক্কুর আলমের ছেলে শরীফ আহমেদ (২০), ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার তাজুল ইসলামের ছেলে কাওসার (২৮), ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার আব্দুল হাইয়ের ছেলে জুয়েল মৃধাসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা দুইজনসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- আজাহার (৩০), ফারুক (২৬), মারুফ (১৯), ইদ্রিস (৩০), রিয়াজ (২৪), স্বপন (৩৫), বাবুল (২১), জাকির (৫২), শামীম (৩০), রায়হানসহ (২৮) অজ্ঞাতনামা অর্ধশতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মাওনা চৌরাস্তার আলহেরা মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, এ পর্যন্ত হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় পাঁচজনের মরদেহ এসেছে। তাদের মধ্যে ৩ জনের নাম পরিচয় জানা গেছে। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ ২২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আলহেরা হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল হোসেন বলেন, দুপুরের পর থেকে গুলিবিদ্ধ ২২ জনসহ ৫০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জারিন ফারা বলেন, বিকালের দিকে চারজন ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসাকে ফোন দিলেও তারা রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে একজন (২৩) নিহত হয়েছেন। তার পরিচয় জানা যায়নি। সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে আন্দোলনকারীরা হামলা চালিয়ে দুইটি ফটক ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভাংচুর শুরু করে। এ সময় আনাসার সদস্যরা গুলি চালায়। এতে অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন।
আহতদের সফিপুর মডার্ণ হাসপাতাল, জেনারেল হাসাপাতাল, তানহা কেয়ার হাসপাতাল ও টাঙ্গাইলের কুমুদিনী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতরা হলেন- কালিয়াকৈর উপজেলার রাখালিয়াচালা এলাকার বেলায়েত হোসেনের ছেলে এলিম হোসেন (৩০), অপর এক যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর।
হামলাকারীরা একাডেমির ভিতরে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। পরে তারা আনসার একাডেমির অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিংসংযোগ করতে গেলে আনসার নির্বিচারে গুলি ছুড়ে। গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক আহত হন।
সফিপুর মডার্ণ হাসপাতালের চিকিৎসক সাদ্দাম হোসেন বলেন, হাসপাতালে দুইজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। এছাড়া আরও দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের গাজীপুর শহীদ তাজউীদ্দন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।