গাজীপুরে গুলিতে ব্যবসায়ী নিহত, আহত শতাধিক
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২০ পিএম
কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গণহত্যা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শনিবার গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। সকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এসময় সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত জাহাঙ্গীরের বাড়ি সাতক্ষীরা বলে জানা গেছে।
এসময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়ীয়া মাস্টারবাড়ি থেকে জৈনা বাজার পর্যন্ত মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থান নিতে থাকেন।
দুপুরে আন্দোলনকারী ছাত্ররা মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর দিকে যায় এবং তারা শ্রীপুর গামী সড়কের ভাই ভাই সিটির নিচে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িতে হামলা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের ওই তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং উড়াল সেতুর নিচে হাইওয়ে পুলিশের দুটি বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া তারা লাঠি-সোঠা নিয়ে সড়কের সাটানো বিভিন্ন ব্যানার ফ্যাস্টুন ছিঁড়ে ফেলে এবং রাস্তার পাশে অবস্থিত শাহজালাল ব্যাংকে হামলা চালায়।
এসময় ছাত্রদের সঙ্গে উৎসুক জনতাও মহাসড়কে নেমে আসে। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের টিয়ারসেল ও বিক্ষুব্ধদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় আশপাশের বাণিজ্যিক বিতান ও দোকানপাট ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ প্রাণ ভয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানান ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারফুল ইসলাম।
পিয়ার আলী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আল নূর বলেন, সারা দেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও পুলিশ বাহিনী অন্যায়ভাবে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সাধারণ নাগরিকদের নির্মমভাবে পেটাচ্ছে। তারা দেশব্যাপী গণগ্রেফতার ও গণহত্যা চালিয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নেমে এসেছি।
একই কলেজের শিক্ষার্থী সুচি আক্তার বলেন, পুলিশের সহায়তায় সারা দেশে নির্মমভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। হাজার হাজার সাধারণ শিক্ষার্থী নিহত-আহত হয়েছে। অনেক শিশুকে গুলি হয়ে নিহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। আমরা এ ধরনের কাজের প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে এসেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি পূরণ না হবে, খুনিদের বিচার নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ আমরা রাজপথে থাকব।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা বলেন, শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি ছিল।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর খান জানান, আমরা নিরস্ত্র হাতে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রীপুর সড়কের অবস্থান করছিলাম। আন্দোলকারীরা হঠাৎ করে নিরস্ত্র পুলিশের উপর হামলা করে। একপর্যায়ে তারা ভাই ভাই সিটির নিচে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা উড়াল সেতুর নিচে হাইওয়ে পুলিশের দুটি বক্সেও আগুন দেয়।