ঢাকা উত্তরে গণগ্রেফতার: আল-আমিনের মতো নিরীহ পরিবারে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
জাভেদ মোস্তফা, যুগান্তর প্রতিবেদক (ঢাকা উত্তর)
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৪:০৮ পিএম
সাভারের শিমুলতলা চার্চের পাশে মায়েশা ট্রেডিং নামের একটি গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে ছোট পদে চাকরি করতেন আল-আমিন। মাত্র ১০ হাজার টাকা বেতনে সংসার চালাতেন। পাশাপাশি বাবার চায়ের দোকানে বসতেন তিনি। সংসারে দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। দেড় বছর আগে বিয়ে করেছেন এই যুবক। স্ত্রী, বাবা মা ও বোনকে নিয়েই ভালোই কাটছিলো তার জীবন। কিন্তু সবকিছু কিছু এলোমেলো হয়ে গেল কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী পুলিশের গ্রেফতার অভিযানে। গত ২২ জুলাই বিকালে নিজের অফিসের নিচতলা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
জানা যায়, সাভার উত্তর ডিবি অফিস ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা অভিযোগে করা মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আল আমিনের নাম। তাকে করা হয়েছে ২ নম্বর আসামি। তবে স্থানীয়দের দাবি, আল-আমিনকে তারা কখনও কোনো ঝামেলায় জড়াতে দেখেননি। নিরপরাধ এই যুবককে দুই নাম্বার আসামি করায় তারা অবাক হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় চলছে পুলিশের গণগ্রেফতার অভিযান। যেখানে যাকে পাওয়া গেছে বাছবিচার ছাড়াই গ্রেফতার করা হচ্ছে। ২২ জুলাই বিকালে আল আমিনকে আটক করে পুলিশ। ওই স্থান থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন এমন আরও তিন জন সহ ১১ জনকে আটক করে মামলার আসামি হিসেবে চালান করে পুলিশ।
ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে গত ২২ জুলাই সাভার মডেল থানায় মামলা করেছেন ঢাকা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন।
তবে এই মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ছাড়াও আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ এমনকি জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীদের নামও রয়েছে। ৯৯ জনের দীর্ঘ তালিকার ২ নম্বরে আসামি হিসেবে রয়েছে মইন উদ্দিন তালুকদার ওরফে আল আমিনের নাম (৩০)।
একমাত্র ছেলেকে আটক করায় তার রেনু বিবি বিলাপ করছেন আর বলছেন, আমার ছেলেডারে ওরা ধইরা নেছে। আমার মানিক তো কোনো অপরাধ করে নাই। ওরে আমার বুকে ফিরায়া দেন’। তার এমন আহাজারিতে আশেপাশের হৃয়দ নাড়িয়ে দিচ্ছে।
আল আমিনের বোন রেখা আক্তার বলেন, আমার ভাই একজন নিরীহ মানুষ। কারও সঙ্গে কখনও কোনো ঝামেলা জড়ায়নি। বাহিরে কারও সঙ্গে তেমন আড্ডাও দিতেন না। পুলিশ অন্যায়ভাবে তাকে আটক করে রাখছে! দেশে কি আইনকানুন নাই!
তবে পুলিশের দাবি, তারা গণগ্রেফতার করছে না। ভিডিও ফুটেজ দেখে অপরাধীদের ধরা হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমাদের কাজ আমরা করেছি। কে নিরীহ আর কে অপধারী তা প্রমাণিত হবে আদালতে। এটা সত্য এই প্রক্রিয়ায় পড়ে নিরপরাধ অনেককেই আটক করা হচ্ছে।
এই জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর ডিবির ওসি মো. রিয়াজ উদ্দিন বিপ্লব যুগান্তরকে বলেন, তিনি মামলার এজহারভুক্ত আসামিদেরই গ্রেফতার করছেন। ভিডিও ফুটেজ ও এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যনুযায়ী আটক করা হচ্ছে। কোনো হয়রানি নয়, তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তাদের আটক করে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে কেউ জড়িত না থাকলে তাদের চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।