Logo
Logo
×

সারাদেশ

গুলিতে নিহত, চরফ্যাশনে ৫ পরিবারে শোকের মাতম

Icon

আমির হোসেন, চরফ্যাশন দক্ষিণ (ভোলা) 

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম

গুলিতে নিহত, চরফ্যাশনে ৫ পরিবারে শোকের মাতম

নিহত হোসেনের স্ত্রী হাসিনুর বেগম দুই সন্তান নিয়ে এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি: যুগান্তর

কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতে শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভোলার চরফ্যাশনের ৫ জন নিহত হয়েছেন। চরফ্যাশনের বিভিন্ন থানা পুলিশের তথ্যমতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, কোটা আন্দোলনে বুধবার কিশোর মো. সিয়াম (১৫), বৃহস্পতিবার হোসেন (২৫) ও শুক্রবারে কিশোর বাহাদুর হোসেন মনির (১৬), কিশোর সোহাগ (১৫) ও যুবক মো. হাছনাইন আহম্মেদসহ (২৬) পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। 

সিয়াম চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ৪নং ওয়ার্ডের জিয়ারুল হকের ছেলে, হোসেন দুলারহাট থানার নীলকমল ২নং ওয়ার্ডের মৃত জাফরের ছেলে, বাহাদুর হোসেন মনির শশীভূষণ থানার রসুলপুর ৪নং ওয়ার্ডের জাফর মাঝির ছেলে, সোহাগ শশীভূষণ থানার হাজারীগঞ্জ ৬নং ওয়ার্ডের স্বপনের ছেলে ও মো. হাছনাইন আহম্মেদ দক্ষিণ আইচা থানার নজরুল নগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আলমগীর হোসেন মালের ছেলে। 

নিহত ৫ জনকেই স্ব-স্ব গ্রামের বাড়িতে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহতের খবর শুনে উপজেলার ৫ গ্রামে শোকের মাতম চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নিহতদের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। আহাজারিতে আকাশ-বাতাশ যেন ভারি হয়ে উঠেছে।

উপজেলার ওসমানগঞ্জ ৪নং ওয়ার্ডের নিহত সিয়ামের মা আঞ্জুরা বেগম জানান, সিয়ামের বাবা জিয়ারুল হক পাটওয়ারী অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে। কোন রকম জীবন পার করছি। ছেলে সিয়াম ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। সংসারের অভাব অনটন দেখে সিয়াম গত রোজার ঈদের পরে কাজের জন্য ঢাকাতে যান। সিয়াম গুলিস্তানের ফুটপাতে একটি ব্যাটারির দোকানে কাজ করছিল। 

সিয়াম ঈদুল ফিতরের ছুটিতে গ্রামে এসে ২৯ জুন আবার ঢাকাতে চলে যায়।  গত ১৭ জুলাই বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিয়াম দোকান বন্ধ করার পর আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। যাত্রাবাড়ীর মাতুইয়ালে ব্রিজের পাশে মেডিকেল সংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়িতে সিয়াম থাকতো।  বাসায় ফেরার পথে হানিফ ফ্লাইওভারে আন্দোলন কারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে সিয়াম গুলিবিদ্ধ হয়। সিয়াম গুলিবিদ্ধ হলে তার সঙ্গে থাকা সাকিব নামের আরেকজন সিয়ামের খালাতো ভাই রাসেলকে খবর দেয়। রাসেল ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সিয়াম ছিলো বড়। বড় ছেলেকে হারিয়ে এখনো শোকে কাতর তার বাবা-মা। 

নিহত হোসেনের স্ত্রী হাসিনুর বেগম ও তার মা রিনা বেগম জানান, নিহত হোসেন পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার ছিলেন। দুই কন্যাসন্তান, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার লাউতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।  গত ১৮ জুলাই রাত ৩টার দিকে হোসেন মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান গেটে ট্রাক বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। পরদিন তাকে গ্রামের বাড়ি নীলকমল ২নং ওয়ার্ডে এনে দাফন করা হয়। তার স্ত্রী হাসনুর বেগম আরও জানান, পরিবারে আয়-রোজগার করার মতো হোসেন ছাড়া আর কেউ নেই। হোসেনের মৃত্যুতে দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বাবাকে হারিয়ে আকলিমা (৫) ও সিমা (৩) নামের দুই সন্তান এখন বাকরুদ্ধ। আমি সরকারের কাছে আমার স্বামী হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি করছি।

নিহত বাহাদুর হোসেন মনিরের বাবা জাফর মাঝি জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে মনির সবার ছোট। তিনি পেশায় একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন। ঢাকার নুরসালা এলাকাতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। মনির গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) আসর নামাজার পরে গুলশান নতুনবাজার যায়। বাড্ডার নতুনবাজার এলাকাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। পরে মৃত্যুর খবর পেয়ে তার ফুফাতো ভাই হাছনাইন আহম্মেদ ঘটনাস্থল গিয়ে দেখেন তার মামাতো ভাই মনিরের লাশ পড়ে আছে। তার লাশ দেখতে পেয়ে হাসনাইন আমাকে খবর দেয়। 

আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়িতে এনে শনিবার দুপুরে দাফন করি। ছোট ছেলেকে হারিয়ে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছাঁয়া। এ সময় মনিরের বাবা জাফর মাঝি সরকারের কাছে এরকম নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান।

নিহত সোহাগের বাবা কৃষক স্বপন জানান, সোহাগ ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাস করত। তিনি রামপুরা এলাকাতে ফুটপাতে জামা-কাপড়ের ব্যবসা করতেন। গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় তার দোকানটি দেখার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিলেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয় এক যুবক সোহাগের মামা আবুল কাশেমকে খবর দিলে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহাগের লাশ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করেন।

নিহত হাছনাইন আহম্মেদের স্ত্রী রুমা বেগম জানান, তার স্বামী হাছনাইন পেশায় ‘আকাশ’ কোম্পানির ডিস ব্যবসায়ী ছিলেন। হাছনাইন স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার স্বামী গত ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্যবসার কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। 

এ সময় স্থানীয়রা হাছনাইনের ছোট ভাই হোসেনকে খবর দিলে হোসেন হাছনাইনের লাশ উদ্ধার করে পরদিন শনিবার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাদের পারিবারিক কবরস্থানে হাছনাইনকে দাফন করা হয়। হাছনাইনের পরিবারের শোক যেন থামছেই না। স্বামীকে যারা হত্যা করেছে সরকারের কাছে তাদের বিচারের দাবি জানান স্ত্রী রুমা বেগম।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন, দুলারহাট, শশীভূষণ ও দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জরা এই প্রতিবেদকের কাছে কোনো মন্তব্য করেননি।

সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের জানান, ঢাকায় নিহত চরফ্যাশনের ৫ পরিবারের কেউই স্ব স্ব থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম