Logo
Logo
×

সারাদেশ

একমাত্র ছেলেকে হাফেজ বানানোর স্বপ্নপূরণ হলো না বাহাদুর খানের

Icon

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ০২:১৮ পিএম

একমাত্র ছেলেকে হাফেজ বানানোর স্বপ্নপূরণ হলো না বাহাদুর খানের

এক গুলিতেই তছনছ হয়ে গেছে মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলে সাদ মাহমুদ খানকে নিয়ে প্রবাসী বাহাদুর খানের স্বপ্ন। গত ২০ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাভারের শাহীনবাগ এলাকায় মডেল কলেজের সামনের ভাড়া বাসার ছাদে ফুফাতো ভাই আর বোনের সঙ্গে খেলা করছিল স্থানীয় জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্র সাদ মাহমুদ খান (১৩)।

এমন সময় বাসার অদূরে নিউমার্কেট এলাকায় বাতাসে আগুনের ধোঁয়া দেখতে পায় সাদ। সেটি নিজের মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে।  সেই সঙ্গে নিজের একটি সেলফি তুলে বাসা থেকে নিছক কৌতূহলের বশে ঘুরতে বেরিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় যায় সাদ। এ সময় চলমান কোটা আন্দোলনের সহিংসতার সময় আচমকাই পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হয় সাদ মাহমুদ খান। স্থানীয়রা হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তরতাজা শিশু সাদ মাহমুদ না ফেরার দেশে চলে যায়।

সাদ মাহমুদ খানের পরিবারে গত ৯ দিন ধরে চলছে শোকের মাতম। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ধল্লা খানপাড়া গ্রামের প্রবাসী বাহাদুর খানের দুই কন্যা আর একমাত্র পুত্রসন্তান ছিলেন সাদ মাহমুদ খান।

ঈদের সময় কিনে দেওয়া জুতা দেখে বাবা নিশ্চিত করেন ছেলে কোটা আন্দোলন দেখতে গিয়ে নিহত হয়।

শুধু সন্তানদের লেখাপড়া করানোর জন্যই সাভারের শাহীনবাগ এলাকায় মডেল কলেজের সামনে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। একমাত্র ছেলে পড়ত সাভারের জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণিতে। প্রবাসী বাবা বাহাদুর খানের স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলে সাদকে কুরআনে হাফেজ বানানো। অন্তত তার মৃত্যুর পর ছেলে তার জানাজা পড়াবে! কিন্তু উলটো পিতার সেই স্বপ্ন দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে বাবার কাঁধে সন্তানকে বয়ে আনতে হলো— এমনটি বলে হাউমাই করে কেঁদে ফেললেন পুত্র হারানোর শোকে কাতর বাহাদুর খান।

তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, আর কারও বাবা-মায়ের কোল যেন পুলিশের গুলিতে খালি না হন।

রোববার দুপুরে সিংগাইরের ধল্লা খানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সাদ আহমেদের বাড়িতে নিস্তব্ধ নীরবতা। বাহাদুর পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা ভিড় জমিয়েছেন।

টানা ১৩ বছর সৌদি আরব আর সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় একনাগারে চার বছর তিন মাস সফর করে ফিরেছেন ফেব্রুয়ারিতে। গত মার্চ পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও পরিবারের আপত্তির কারণে আর যাননি আফ্রিকায়। সন্তানদের একটু ভালো লেখাপড়ার জন্য গত পাঁচ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস সাভারে। বড় মেয়ে তাসলিমা খানম নাজনীন লেখাপড়া করছে সাভারে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে অর্নাসের দ্বিতীয় বর্ষে। ছোট মেয়ে আফরোজা খানম নুসরাত পড়ে জাবালে নুর মাদ্রাসা প্রাথমিকে। আর একমাত্র ছেলে মাহমুদ খান পড়ত সাভারের জাবালে নূর দাখিল মহিলা মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বয়স ১৩ বছর ৯ মাস।

বাহাদুর খানের দাবি, সাভারে নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারা যায় তার ছেলে। পুলিশ তার ছেলেকে বলেছিল দৌড় দে! এ কথা বলে পুলিশ তাকে গুলি করে। স্থানীয়রা আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায় সাদ।

নিহত ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, তার ছেলে খেলাধুলার প্রতি ছিল ভীষণ আগ্রহ। ফুটবল ছিল তার প্রায়ই খেলা। বাসার ছাদেও খেলত। প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। সপ্তাহে বাবার কাছে বায়না ছিল গ্রামের বাড়ি ধল্লা নিয়ে যেতে হবে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণখুলে খেলবে। ছেলের আবদার রক্ষা করতেন বাহাদুর।

ছেলে স্মৃতিচারণ করে কাঁদতে কাঁদতে জানালেন আর কোনোদিন বায়না ধরবে না সাদ। তার নিজেরও ইচ্ছেপূরণ হলো না ছেলেকে কুরআনে হাফেজ বানানোর। তার মতোর আর কোনো বাবা যেন পুলিশের গুলিতে পুত্র না হারায়। তার ছেলে কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তিনি সিংগাইরের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

স্থানীয় ধল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, তার গ্রামের বাহাদুর খানের ছেলে সাদ মাহমুদ খান সাভারে কোটা আন্দোলনের সময় মারা যায়। এ ঘটনায় ওই পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম