রামপুরায় সহপাঠীদের সামনে বুকে গুলি লেগে পড়ে যায় শিশু তামিম

আব্দুল মান্নান, ভাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১০:১১ পিএম
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার হামেরদী ইউনিয়নের খাপুরা গ্রামের জুয়েল শিকদার ১৫ বছর যাবত পরিবার নিয়ে ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাস করেন। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক। অভাব অনটনের মধ্যে রিকশা চালিয়ে তিনি সংসার চালাতেন।
নিজের বলতে জায়গা জমি ঘর দরজা কিছুই ছিল না। গ্রামের বাড়ি খাপুরায় মাঝে মধ্যে এসে অন্যের ঘরে থাকতেন। রিকশাচালক জুয়েল শিকদারের একমাত্র পুত্র তামিম শিকদার (১০) ঢাকার রামপুরা প্রাইমারি স্কুলের ৩য় শ্রেণিতে লেখাপড়া করত।
১৯ জুলাই বিকালে রামপুরায় ছাত্র ও পুলিশের গণ্ডগোলের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় তামিম শিকদার। টাকার অভাবে ভাঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে নিতে পারেননি তার বাবা। ঢাকায় তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র ও পুলিশের গোলাগুলিতে দুই শিশু এক কলেজছাত্রসহ মোট ৩ জন নিহত হয়েছেন ভাঙ্গার।
গুলিতে নিহত তামিমের বাবা জুয়েল শিকদার জানান, আমাদের বাসার আশপাশের মহল্লার শিশুরা বিকালে রাস্তার পাশে প্রতিদিন মাঠে খেলতে যায়। গত ১৯ জুলাই বিকালে ৩টার সময় তামিম সহপাঠীদের নিয়ে রামপুরা এলাকায় বল খেলতে যায়। তার পাশে রাস্তার ওপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্ররা ও পুলিশের মধ্যে গণ্ডগোল হচ্ছিল। সব শিশু রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তা দেখছিল।
অন্য শিশুরা জানায়, হঠাৎ তামিম চিৎকার দিয়ে পড়ে যায়। সবাই দেখে তামিমের বুক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তারা আমাদের বাসায় এসে খবর দেয়। আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি তামিমের বুকে একটি গুলি লেগেছে। তামিমকে রিকশা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তামিমকে ভাড়া বাসার সামনে নিয়ে আসি এবং ওই রাত ১২টার দিকে রামপুরা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে সবাই এখন পাগল হয়ে গেছে।
নিহত তামিমের চাচা খাপুরা গ্রামের মিরাজ শিকদার বলেন, আমার বড় ভাই জুয়েল শিকদার অনেক গরিব মানুষ। ১৫ বছর আগে বাড়ি থেকে ঢাকার রামপুর এলাকায় গিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সেখানে মা, বোন, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান তামিমকে নিয়ে রামপুরা এলাকায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। বছরে ২-১ বার ভাঙ্গার খাপুরা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন।
তিনি জানান, তামিমের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ও দেশের পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমরা কেউ ঢাকায় যেতে পারিনি। আমার ভাতিজা তামিমকে হারিয়ে তার দাদি, ফুপু, বাবা-মাসহ সবাই এখন পাগলের মতো হয়ে গেছে। শুনতে পারলাম সরকার থেকে তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। লাশ গ্রামের বাড়িতে আনার মতো তাদের কোনো সামর্থ্য ছিল না। আমরা ভাঙ্গা থেকে টাকা পাঠাব, তার কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। পরে ওই রাত ১২টার দিকে রামপুরা কবরস্থানে তামিমকে দাফন করা হয়েছে।