Logo
Logo
×

সারাদেশ

ইতিহাসের সাক্ষী আম্রকাননের গাছগুলো মারা যাচ্ছে

Icon

তোজাম্মেল আযম, মেহেরপুর

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম

ইতিহাসের সাক্ষী আম্রকাননের গাছগুলো মারা যাচ্ছে

ছবি: যুগান্তর

বৈদ্যনাথতলা আম্রকানন। বাংলাদেশের আট-দশটা গ্রামের মতোই সবুজ শ্যামল একটি গ্রাম। মেহেরপুর জেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি গ্রাম এই বৈদ্যনাথতলা। এ গ্রামের আম্রকাননেই শপথ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। উদিত হয়েছিল অস্তমিত স্বাধীনতার সূর্য।  

এ গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি জাতির স্মৃতি কথা। স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উড়িয়েছিল এই গ্রামেরই কতিপয় লোক- শূন্যহাতে, নগ্নপদে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হয়েছিল ইতিহাসের সূর্যসন্তানরা। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে দেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণের সময় মুজিবনগর নামকরণ করা হয় বৈদ্যনাথতলা গ্রামকে। 

দেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর আম্রকাননে ছিল সারিবদ্ধ ১ হাজার ২৬০টি আমগাছ। যার মধ্যে মধ্যে আজও বেঁচে আছে প্রায় ১১০০ গাছ। তবে পরিচর্যা, গাছের ঘনত্ব ও পুষ্টির অভাবে মারা যাচ্ছে শতবর্ষী গাছগুলো। ঐতিহাসিক মুজিবনগরের আমবাগানের পরিচর্যা, রক্ষণা-বেক্ষণ ও উদ্ভিদসমূহ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আমগাছগুলোর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। 

দুই বছর আগে গাছগুলো বাঁচাতে ৮০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় জেলা প্রশাসন; কিন্তু আজও কার্যক্রম শুরু হয়নি। 

সরেজমিন দেখা যায় ৩০ একর আয়তনের এই আম্রকাননে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০টির অধিক গাছ মরে দাঁড়িয়ে আছে। আরও কিছুগাছ মৃত্যু পথযাত্রী। বাগানজুড়ে আগাছা ও গাছের ঘনত্ব বেশি, পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া ও পরিচর্যার অভাবেই গাছগুলো মারা যাচ্ছে। মনোমুগ্ধকর ও ঐতিহ্যবাহী বাগানটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে দিন দিন মলিন হয়ে পড়েছে। শতবর্ষী গাছগুলো ছায়া ও ফলদানের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তাই যথাযথ পরিচর্যায় বাগানের প্রাণ ফিরিয়ে আনার দাবি সবার।

বাগানের কোলঘেঁষে বসবাসকারীদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেকেরই অভিযোগ-প্রশাসন প্রতি বছর ছয়-সাত লাখ টাকায় ফল বিক্রি করলেও বাগানের কোনো পরিচর্যা করে না। প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাগান ঝাড়ু দেওয়া আর গাছের গোড়া রং করা ছাড়া কোনো কাজ চোখে পড়ে না।  

মুজিবনগর উপজেলা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ও মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বলেন- ইতিহাসের সাক্ষী গাছগুলোকে রক্ষা করতে হবে; কিন্তু কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ২০২২ সালে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও তা থেমে গেছে।   

নানা দিক বিবেচনা করে ২০২২ সালে বাগানের ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরামর্শক কমিটি গঠিত হয়। 

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপরিচালকের (ডিডি) নেতৃত্বে কমিটিতে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বারাদী হর্টিকালচারের উপ-পরিচালককে সদস্য রাখা হয়। সেই কমিটি সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছে। প্রস্তাব বাস্তবায়নে ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. শামীম হাসান যুগান্তরকে বলেন-বয়সের কারণেই গাছগুলো মারা যাচ্ছে। কিছু গাছ লাগানো হয়েছে। এই মৌসুমে আরও গাছ লাগানো হবে। ঐতিহাসিক মুজিবনগরের আমবাগানের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উদ্ভিদসমূহ সংরক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে ৭০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম