বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের সদন নিজের নামে ব্যবহার করে শিক্ষকতা করছেন ২৫ বছর ধরে। এই গুরুতর অভিযোগ রয়েছে রংপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. কাজল মাহমুদের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর জেলার সদর উপজেলাধীন শ্যামপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. কাজল মাহমুদ তিনি দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষকতার পেশায় জাল সনদে চাকরি করে আসছেন। কর্মজীবনের প্রথম তিনি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ মহিলা কলেজে ১৯৯৯ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রভাষক (ইংরেজি) হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০০০ সালের মে মাসে এমপিওভুক্ত হন। সেখানে তিনি ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি কাউনিয়া মহিলা কলেজে ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর শ্যামপুর মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।
অধ্যক্ষ মো. কাজল মাহমুদের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দেখা যায়, এসএসসির সনদ অনুযায়ী তিনি যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলাধীন পাঁচগাছি ইউনিয়নে। বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৮৭-১৯৮৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি রেজিস্টারে দেখা যায় মো. কাজল মাহমুদ নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তবে এই মো. কাজল মাহমুদ খেপুপাড়া পৌরসভার বাসিন্দা। তিনি বর্তমান বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক।
ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ মো. কাজল মাহমুদকে তার জাল সনদের কথা জানালে প্রথমে তিনি অস্বীকার করেন। পরে যশোর শিক্ষা বোর্ড হতে তার সনদের সত্যায়নকৃত জাল সনদের কপি দেখানো হলে তিনি জাল সনদের বিষয়টি স্বীকার করেন। অবশেষে তিনি নিজেকে জালিয়াতির ঘটনা থেকে বাঁচতে ৪ জুলাই শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে সদর উপজেলার শ্যামপুর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকৃত কাজল মাহমুদ ওরফে রাফসান মাহমুদের এসএসসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৭৬০৫৮ এবং সেশন ১৯৮৭-৮৮। অপরদিকে ভুয়া কাজল মাহমুদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও সেশন একই। প্রকৃত কাজল মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজিতে মাস্টার্স শেষ করার পর দেশের বাইরে ডক্টরেট করার জন্য ছুটিতে চলে যান। সেই সময় তিনি তার সব সনদ ইংরেজি ভার্সন করতে প্রথমে যশোর শিক্ষা বোর্ডে জানতে পারেন, তার এসএসসি সনদ অন্য কেউ ডুপ্লিকেট করে উত্তোলন করেছেন।
এভাবে এইচএসসি, অনার্স এবং মাস্টার্স সনদও ডুপ্লিকেট উত্তোলন করা হয়েছে। তখন তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরামর্শে কোর্টের মাধ্যমে তার নাম এফিডেভিট করে মো. কাজল মাহমুদ আংশিক পরিবর্তন করে রাফসান মাহমুদ হন এবং এভাবে অন্যান্য সনদও সংশোধন করেন একই নামে; কিন্তু বিষয়টি তদন্তের আগে পর্যন্ত অধ্যক্ষ মো. কাজল মাহমুদ যে জালিয়াতি করে সনদ সংগ্রহ করেছেন তা কেউ বুঝতেই পারেননি।
এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. কাজল মাহমুদ নামে আর কোনো এসএসসি সনদ যশোর শিক্ষা বোর্ডে নাই, এমনকি এইচএসসি এবং অনার্স-মাস্টার্সও নাই।
এ বিষয়ে আসল কাজল মাহমুদ বর্তমান রাফসান মাহমুদ বলেন, আমার সনদ জাল করে কেউ একটা কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে আছেন, আমি আগে কিছুই জানতাম না। কলেজ কর্তৃপক্ষের তদন্তের মাধ্যমে জানতে পেরে বিষয়টি জেনে আমি হতবাক হয়েছি। তিনি জানিয়েছেন এ নিয়ে তিনি কোনো আইনি আশ্রয় নেবেন না। কারণ তার এ ঘটনায় তার চাকরি চলে গেছে। তার শাস্তি সে পেয়ে গেছে।
তবে বিষয়টি বর্তমানে ধামাচাপা দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে কলেজ উপাধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। গত ৪ তারিখের মিটিংয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে পদত্যাগ করেছেন।
একই কথা বলছেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পারভিন আক্তার। তিনি বলেন, কলেজের বিষয়ে আমি তেমন কিছুই জানি না। শুধু শুনেছি তিনি অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেছেন।
এমন অভিযোগের বিষয় মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কাজল মাহমুদ এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।