পটুয়াখালী মহিলা লীগের সম্পাদক বেবি গ্রেফতার
পটুয়াখালী দক্ষিণ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৮ পিএম
ঋণখেলাপির মামলায় পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা বেবিকে গ্রেফতার করেছে পটুয়াখালী থানা পুলিশ। বুধবার দুপুরে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, পটুয়াখালী বিসিক শিল্পনগরীতে জাকিয়া সুলতানা বেবি ও তার স্বামী মৃত সিরাজুল ইসলাম খানের যৌথ মালিকানাধীন পটুয়াখালী টেক্সটাইল মিলের নামে ১৯৮৫ সালে সোনালী ব্যাংক পটুয়াখালী শাখা থেকে ২ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। মর্টগেজ বাবদ জমা দিয়েছেন তাদের বরিশাল রূপাতলী এসএ ২৭০০ মৌজা খতিয়ান জমির দলিল ও মৃত সিরাজুলের মালিকাধীন পটুয়াখালী সিএনভি সড়কের বাড়ির দলিল।
৩৯ বছর আগে নেওয়া ওই ঋণ আদায়ে ব্যাংক থেকে কয়েকবার সম্পূর্ণ সুদ মওকুফের সুবিধা দেওয়া হলেও এক টাকাও পরিশোধ করেননি আওয়ামী লীগ নেত্রী জাকিয়া ও তার স্বামী সিরাজুল। আসল টাকা আদায়ের জন্য ১৯৯৪ সালের ৯ এপ্রিল, ২০১১ সালের ২৭ জুলাই ও ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি শতভাগ সুদ মওকুফের অনুমোদন দেয় তৎকালীন পটুয়াখালী সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সেই টাকা পরিশোধ না করলে সর্বশেষ তাকে ৬ বছরে ৭২ কিস্তিতে ৩ কোটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হলেও তিনি সেই সুযোগটিও গ্রহণ করতে পারেননি। সুদাসলে বর্তমানে সেই টাকার আদায়যোগ্য পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৮৮৪ টাকা।
১৯৯৩ সালে জাকিয়ার স্বামী সিরাজুলকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সালে পটুয়াখালী অর্থ ঋণ আদালতে একটি খেলাপি ঋণের মামলা দায়ের করে। মামলা চলমান অবস্থায় সিরাজুল মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পরে ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ মালিক হন জাকিয়া ও ঋণখেলাপির মামলাটির মূল বিবাদী হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে।
তবে ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অগোচরে ঋণের অনুকূলে দেওয়া বরিশাল রুপাতলি এলাকার জমির ২৮ শতাংশ অন্যায়ভাবে বিক্রি করে দেন।
এদিকে তার মৃত স্বামীর নামের পটুয়াখালীর বাড়িটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিলাম করার কথা জানতে পেরে তিনি ২০১৬ সালে তার প্রবাসী আপন বড় ভাই মাহাবুবুর রহমানকে বাদী করে আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করান; যাতে ওই বাড়ির রায় তার ভাইয়ের নামে পেতে পারেন। বর্তমানে সেই মামলাটি চলমান রয়েছে। এ মামলার কারণে জমি নিলাম করে ব্যাংক ঋণ প্রদানকৃত টাকার কিছু অংশ আদায়ের চেষ্টাও এখন রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে।
এদিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন টালবাহানা করে ঋণের দায় পরিশোধ না করায় ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর পটুয়াখালী যুগ্ম জজ ১ম আদালতের বিচারক মো. হুমায়ুন কবির জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা বেবির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তবে দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও কোনো অজানা কারণে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ।
পটুয়াখালী সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমানের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মামলার ঋণখেলাপি জাকিয়া সুলতানা বেবি গ্রেফতার হয়েছেন জানতে পেরেছি। এটা আদালতের বিষয় আমি আমার উপরস্থ কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলতে পারছি না।
পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. জসীম বলেন, জাকিয়া সুলতানা বেবিকে অর্থ ঋণ আদালতের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।