Logo
Logo
×

সারাদেশ

৬ কেজি চালের দামে মিলছে ১ কেজি কাঁচা মরিচ

Icon

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৪ এএম

৬ কেজি চালের দামে মিলছে ১ কেজি কাঁচা মরিচ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পুঁই শাক, পাট শাক, কচু শাক, কলমি শাক, ধনেপাতা, কচুর ছড়া, চিচিঙ্গা, বরবটি, আদা, হলুদ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজির দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের যখন নাভিশ্বাস সেই মুহূর্তে আলোচনায় এসেছে কাঁচা মরিচ। শহরের ৫টিসহ ৩৫টি বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে তিনগুণের বেশি।

রোববার (৭ জুলাই) বিকালে পৌর শহরের নতুনবাজার ও মুড়িহাটা ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি মরিচ ৩০০ টাকায় কিনে খুচরা বাজারে দোকানদাররা বিক্রি করছে ৩২০ টাকায়। কেজিতে ক্ষুদ্র ভোক্তাদের কাছে ২০ টাকা বেশি নিচ্ছে। বর্তমানে মরিচের বাজার দরে অতিষ্ঠ ক্রেতারা। কেউ কেউ কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনো মরিচের গুঁড়া বা প্যাকেট কিনছেন। আবার শুকনা মরিচ প্রকারভেদে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা। আর বাজারে মোটা চাউলের কেজি ৫৫টাকা বিক্রি।

নতুন বাজারে দেখা হয় কৃষি শ্রমিক ও সবজি ক্রেতা মালেক মাজি (৫৫) জানান, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মিল নাই। সারাদিন আয় হয় ৩০০ টাকা। তাও কাজ কোনোদিন হয়, কোনোদিন হয় না। তাহলে গরিব মানুষের বাঁচার উপায় কী? 

তিনি বলেন, আলু, বেগুন, ঢেঁড়স, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, হলুদ বরবটি, কচুর ছড়া, পটলসহ সব কিছুর দামই বেশি। একটু বৃষ্টি নামলেই ব্যবসায়ীরা অজুহাত দেয় আজ মরিচের আমদানি নাই। তাই মরিচসহ প্রত্যেকটি কাঁচামালের দাম বেড়েছে।

পৌর শহরের দেনায়েতপুর গ্রানের খলিল মুন্সি (৪২) বলেন, বাজার মনিটরিং না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা চড়া দামে এসব পণ্য বিক্রি করছে।

এদিকে, হাটবাজার মনিটারিং কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, খুব শিগগরিই বাজার দর স্থীতিশীল রাখতে অভিযান চালানো হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ করা হয়েছে। প্রথম দিকে আবহাওয়া একটু খারাপ হলেও পরে স্বাভাবিক হয়, ফলে মরিচের উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তারপরেও কারণ-অকারণে কাঁচা মরিচের দাম ওঠানামা করছে।

রায়পুর শহরের কাঁচামালের আড়তদার মো. ইউসুফ জানান, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম ও মুন্সিগন্জ থেকে আমাদের এখানে কাঁচা মরিচ আসতো। কিন্ত চলতি বর্ষা মৌসুমে অন্যান্য জেলাসহ স্থানীয় মরিচ চাষিদের ক্ষেতে গাছ মরে যাওয়ায় বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। পাইকারি প্রতিকেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে শুনছি, খুচরা বাজারে নাকি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই কথা জানান, আড়তদার নাজিম উদ্দিন। 

তারা আরও জানান, অনেক ব্যবসায়ী আগেই কৃষকের কাছে মরিচ ক্ষেত কিনে নেন। পরে সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে আড়তে বিক্রি করেন।

রায়পুর হায়দরগঞ্জ বাজারের খুচরা বিক্রেতা আবু বকর ও জায়েদ জানান, আড়তদাররা মরিচ সাপ্লাই দিতে পারছে না। তাই বেশি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও মরিচ বাসি হলে পচে যায় এবং ওজনে কম হয়। ফলে বাধ্য হয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার বেশি হওয়ায় ক্রেতারা কাঁচা মরিচ কিনছে না। অনেকেই প্যাকেটের গুঁড়া মরিচ কিনছে।

মেসে রান্না করার কাজে মরিচ কিনতে আসা নতুনবাজারের মাহমুদা বেগম বলেন, ‘মাছ, মাংস রান্নায় কাঁচা মরিচের দরকার হয়। তরকারির স্বাদও ভালো হয়। কিনতে এসে দেখি, এক কেজি চালের দামের চেয়ে এক কেজি মরিচের দাম তিনগুণ বেশি। তাই কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনা মরিচ গুঁড়া কিনলাম।’ 

চরবংশীর মোল্লারহাটবাজারের আসা মেঘনার পাড়ের চাষি মাহমুদ আলী জানান, বৃষ্টি ও গরমের কারণে অনেক মরিচ গাছ ক্ষেতে নষ্ট হয়েছে। গাছ মরে যাওয়ায় ফলন নাই। যারা আদার ক্ষেতে মরিচ লাগিয়েছে, শুধু তারাই একটু ফলন পাচ্ছে। এই জন্য বাজারে মরিচের আমদানি নাই। ফলে দামও অনেক বেশি।

জেলা হাট বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় মরিচের উৎপাদন কমেছে। ফলে দাম একটু বেশি। তবে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম