প্রতারক চক্রের ফাঁদ
দুই কোটি টাকার সম্পত্তি হারিয়েছেন এক নারী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৩:২১ এএম
মোংলা থানার দিগরাজ এলাকায় অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক নারী। প্রতারক চক্র তার প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছে।
ওই নারীর নাম রেনুয়ারা (৬৫)। শুধু সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে ক্ষান্ত হয়নি প্রতারক চক্র, এখন তারা তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। বলছে, বাড়াবাড়ি করলে হত্যা করে লাশ পশুর নদীতে ফেলে দেওয়া হবে।
এ ঘটনায় মোংলা থানার সাবরেজিস্ট্রারসহ (২০২৩ সালে কর্মরত) ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এজাহারে সংশ্লিষ্ট ভুয়া দলিল ও ভুয়া রেজিস্ট্রেশনগুলো বাতিলের আবেদন করা হয়েছে। বুধবার যুগান্তর কার্যালয়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে এ তথ্য জানান রেনুয়ারা।
তিনি বলেন, মামলার পর তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ভয়ে নিজের বাড়িতে (মোংলা) যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনিদের ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। একমাত্র মেয়ে নাসরুম আলম এই মামলার বাদী। মেয়ের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত তিনি।
মামলার আসামিরা হলেন-গোলাম শারাফাত শাকিল, মো. আব্দুর রহমান, ফজলু সরদার, কামাল হোসাইন, শেখ মাহামুদ হাসান, বাবুল হোসেন, রেজাউল ইসলাম ওরফে আলম ফরাজী ওরফে হাজী আলম, সেলিম মোল্লা ও গাউছ ফকির।
জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার সিগন্যাল টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা রেনুয়ারা বেগমের মালিকানাধীন ১.২০ একর সম্পত্তি স্থানীয় একটি দালাল চক্র সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে। মোংলা থানার দিগরাজ বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নে ভুক্তভোগীর নামে ১.২০ একর (প্রায় সোয়া ২ বিঘা) জমি রয়েছে।
স্থানীয় দালাল ফরাজি আলম ও গাউছ ফকিরের নেতৃত্বাধীন চক্র এই জমি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলে পাওয়ার রেজিস্ট্রি করিয়ে নেয়।
প্রতারক চক্রটি পাওয়ার রেজিস্ট্রির নামে সুকৌশলে এই সম্পত্তির মালিকানা নিজেদের নামে করিয়ে নেয়। ঘটনার প্রায় ২ মাস পর বিষয়টি জানতে পারেন রেনুয়ারা। জমির দালাল ফরাজী আলম ওরফে হাজী আলম ও গাউছ ফকির গ্যাং মূলত একটি প্রতারক চক্র। এর আগে বহু লোকের জমি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলে এভাবে আত্মসাৎ করেছে। ভুক্তভোগী ওই নারী তাৎক্ষণিক বাগেরহাট জেলা আদালতে গিয়ে ‘পাওয়ার’ বাতিলের আবেদন করেন।
এদিকে পাওয়ার বাতিলের মামলার কথা শুনে ফরাজী চক্র ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকে। জানা গেছে, আলম ফরাজীর নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে এলাকার বয়স্ক পুরুষ-মহিলাদের নামে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও টিন নম্বর তৈরি করত।
এসব জাল এনআইডি ও টিন নম্বর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে তৈরি করত জমি বা ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল। ভুয়া দলিল বিভিন্ন ব্যাংকে বন্ধক রেখে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ নিত। চক্রের সদস্যরা ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র দিয়ে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন।
জমি জালিয়াতি চক্রের মাস্টারমাইন্ড আলম ফরাজী ওরফে হাজী আলম ও তার সহযোগীরা মিলে দীর্ঘদিন ধরে এই জালিয়াতি করে আসছে। এভাবে প্রতারণা করে আলম ফরাজী (হাজী আলম) বহু টাকার মালিক হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (মোংলা সার্কেল) মুসফিকুর রহমান তুষার বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ চলছে।