Logo
Logo
×

সারাদেশ

চিকিৎসকদের কড়া বার্তা দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

Icon

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৬ পিএম

চিকিৎসকদের কড়া বার্তা দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে ২ দিনের সফরে এসে চিকিৎসকদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গাইনি চিকিৎসকরা ঢাকায় চলে যেতে চান। সবাই যদি ঢাকায় যেতে চান তাহলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চলবে কেমন করে? প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা অনুশাসন দিয়েছেন।

তিনি আমাকে বলেছেন, যার যেখানে পোস্টিং তার সেখানেই চাকরি করতে হবে। কেউ যদি যেতে না চায় বা আসতে না চায় তাহলে তাকে বলবা চাকরি ছেড়ে দিতে। যাকে যেখানে পোস্টিং দেওয়া হবে সেখানে তাকে যেতেই হবে। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সম্মেলন কক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছান ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বিকালে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং হাসপাতালের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সম্প্রসারিত নবজাতক ওয়ার্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। রাতে হোটেল র‌্যাডিসনে চট্টগ্রাম কার্ডিওলজি সোসাইটি আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক হৃদরোগ বিষয়ক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। চমেক হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চলে যান হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে তিনি নিজের ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। এরপর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। সেখানে সেবা নিতে যাওয়া রোগীরা মন্ত্রীর কাছে নানা অভিযোগ করেন। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাওয়ার খবরে হাসপাতালের চিত্র পালটে যায়।

চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল শতভাগ। রোগী ও তাদের অভিভাবক এবং স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসক পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত সেবাও মেলে না। হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আগামী অর্থবছরে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি শুধু বেসরকারি হাসপাতাল নয়, সরকারি হাসপাতালসহ সব জায়গায় ঘুরব। আমার টার্গেট হচ্ছে সবকিছু দেখা। একদম প্রান্তিক পর্যায়ের কমিউনিটি, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলার হাসপাতালগুলোর দিকে আমার বিশেষ নজর থাকবে। 

এদিকে শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের বেসরকারি মেডিকেল সেন্টার ঝটিকা পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ইউনিফর্ম না থাকা, সাকার মেশিন না থাকা ও অক্সিজেন সিলিন্ডার খালি দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে উপস্থিত কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেন তিনি। এ ছাড়া এক রোগীর কাছ থেকে ২ দিনে ২০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়ায় বিষয়টি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনকে দেখতে বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মতবিনিময়কালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি ঠিক করেছি, ঢাকায় ২ দিনের বেশি থাকব না। সারা দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আমি নিজে গিয়ে দেখব। সাংবাদিক ভাইয়েরা লেখেন, আমি না কি অভিযান চালাই। আমি অভিযান চালাই না, পরিদর্শন করি। অভিযান তো হয় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে, আসামিদের বিরুদ্ধে। আমি কার বিরুদ্ধে অভিযান চালাব? প্রত্যেকটা রোগী সুচিকিৎসা পাচ্ছেন কিনা, ডাক্তাররা কিভাবে কাজ করছেন, তারা সুরক্ষিত আছেন কিনা সেটা দেখার জন্য আমি পরিদর্শনে যাই।

সংসদ-সদস্যদের নিজ নিজ এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, দেশে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা থাকা সত্তে¡ও মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তো দেশেই চিকিৎসা নেন। আপনারা সংসদ-সদস্যরা যার যার এলাকায় স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে যদি নিয়মিত চেকআপ করান, চিকিৎসা নেন, তাহলে হাসপাতালের চিত্র পালটে যাবে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হবে। আস্থা ফিরে আসবে। মানুষ চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যাবেন না।

মন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সাক্ষাৎ করেছিলাম। সেখানে আমরা স্বাস্থ্য খাত নিয়ে প্রেজেন্টেশন প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম। বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা যে প্রসিডিওর, মডেল তৈরি করেছি সেটি অনুযায়ী কাজ করতে পারলে স্বাস্থ্য খাতে ভালো কিছু হবে।

তিনি আরও বলেন, রোগী যেন উপযুক্ত চিকিৎসা পান সেটি দেখা যেমন আমার দায়িত্ব, তেমনি ডাক্তাররাও যেন চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সুরক্ষা পান, সেটি দেখাও আমার দায়িত্ব। রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা আমার। একজন চিকিৎসকের জন্য আমি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে চাই। মহিলা ডাক্তারদের রাতে ডিউটি করার সময় যেন কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তার জন্য আমি কাজ করছি।

চমেক হাসপাতালে মতবিনিময়ের আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক, শিশু হেমাটোলজি, অনকোলজি ও ইউরোলজি বিভাগ এবং কাজ শুরুর জন্য অপেক্ষমাণ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন। বার্ন ইউনিট প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এটি যেহেতু একনেকে পাশ হয়ে গেছে, আর কোনো সমস্যা নেই। আমি যেভাবে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট একদিনে পুরোপুরি চালু করতে পেরেছিলাম, এক্ষেত্রেও আমার টার্গেট সেটাই।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম