যশোর শহরের খড়কি অঞ্চলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট, রেলওয়ের তিনটি কালভার্ট বেদখল ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে শহরের পানি নামতে পারছে না। অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নঞ্চল। নালার পানি রাস্তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই চিত্র শুধু চলতি বছরের নয়। এক যুগের বেশি সময় ধরে এমন ভোগান্তির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে এলাকার ২০ হাজার বাসিন্দা। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।
জানা যায়, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু পৌরসভা নির্মিত পয়ঃনিষ্কাশন নালা (ড্রেন), রেলের তিনটি কালভার্ট ও শহরের গাজীর বাজার-চাঁচড়াগামী সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ভরাট ও বেদখল হওয়ায় পানি মুক্তেশ্বরী নদীতে যেতে পারছে না।
২০১০ সালের পর থেকে খালটির বিভিন্ন স্থানে মাটি ফেলে আড় বাঁধ দিয়ে চলাচলের অস্থায়ী রাস্তা নির্মাণ করেছে স্থানীয়রা। ১৫ ফুট চওড়া খালটিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ব্যক্তি মালিকানায় স্থাপনা নির্মাণ করায় তা এখন মৃতপ্রায়। এবার সড়ক উন্নয়নের নামে খালটি ভরাট করা শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করতে খালের খড়কি অংশ ভরাট করার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে খালটি একেবারেই ভরাট হয়ে গেলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী।
খড়কির শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের দক্ষিণ ফটক (গেট) থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি জমেছে। খড়কি দক্ষিণপাড়া-পশ্চিমপাড়া হাজামপাড়া, খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। সড়কে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে অনেককে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
খড়কি কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, ৪০ বছর ধরে এই এলাকাতে বাস করি। আগে জলাবদ্ধতা হতো না। কালভার্ট দখল হয়েছে। খালও মরে গেছে। অল্প বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় এলাকাটি। ভারি বৃষ্টি হলে পানি নামতে দুই-তিনদিন লেগে যায়। এই এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
খড়কি পীরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, খাল বেদখল, পর্যাপ্ত নর্দমার অভাব, বক্সড্রেনের নামে খালনালা হত্যাসহ নানা কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিনেও পৌরসভা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করতে পারেনি। তাই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবতে হয় এলাকার মানুষকে।
খড়কির বাসিন্দা প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই এলাকাটা শহরের অন্য এলাকার চেয়ে তুলনামূলক নিচু। রাস্তার পাশে পয়ঃনিষ্কাশনের নালা দিয়ে অন্য এলাকার পানি আসে। ওই পানি বের হতে পারছে না। আবার পানি বের হওয়ার কালভার্ট দখল ও খাল ভরাটের কারণে পানি বের হতে পারছে না। পানি জমে থাকায় বিটুমিনের আস্তরণ উঠে রাস্তার মধ্যে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পৌরসভার দ্বারস্থ হলেও সমাধান হয়নি।
যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান জানান, খড়কি অঞ্চলে রেলের কালভার্ট দখল ও ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। আবার খালও ভরাট হয়ে গেছে। আমরা দুটি দপ্তরকেই চিঠি দিয়েছি। তারা আন্তরিক না হলে সমস্যার সমাধা হবে না।
তিনি আরও জানান, শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তা ও নালা সংস্কার, এবং নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।