ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চার পরিবার সমাজচ্যুত
চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৭ পিএম
প্রতীকী ছবি
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছেন এলাকাবাসী। এমন সিদ্ধান্তে অসহায় হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
ছেংগারচর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড জোড়খালী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুদ্দিন। তিনি স্থানীয় মসজিদের ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২২ জুন তার ফেসবুকে একটি মতামত পোস্ট করেন। ওই পোস্টে কমেন্ট করে একই এলাকার আরও তিন পরিবারের সদস্য। ফেসবুকে মতামত পোস্ট করায় গেল ২৯ জুন রাতে মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে চার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেন তারা।
তবে তারা মসজিদ কমিটির কাছে ক্ষমা চাইলে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে। সিদ্ধান্তের পরপরই শিপন আহম্মেদ নামের স্থানীয় বাসিন্দার ফেসবুক আইডি থেকে সাইফুদ্দিনের ছবি সংবলিত ‘সমাজ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে’ বলে প্রচার করা হয়। তারপর থেকে সমাজের লোকজন এই চার পরিবারের সাথে কথা বলা ও চলাফেরা বন্ধ করে দেন। এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও মানহানির বিচার চায় পরিবারগুলো।
ভুক্তভোগী সাইফুদ্দিন বলেন, পৌর কাউন্সিলর সবুজ বেপারী গেল নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তার যোগসাজশে আমাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি ফেসবুকে কারও নাম নিয়ে পোস্ট করিনি। পোস্টে ছিল- ‘মসজিদের ইমাম পাল্টানো যায়, ঘুসখোর আর সুদখোর পাল্টানো যায় না’। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে স্থানীয় কাউন্সিলর সবুজ বেপারী তার আপন খালাতো ভাইকে দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে।
জোড়খালী গ্রামের বেপারী বাড়ির সাইফুদ্দিন, সরকার বাড়ির গোলাম নবী সরকার, জোবায়ের ও মানিক সরকারের চার পরিবারে ৩৯ সদস্যের বসবাস। সাইফুদ্দিনের পোস্টে মসজিদ কমিটির সম্মানহানি হয়েছে বলে দাবি করেন মসজিদ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজী।
জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর সবুজ বেপারী বলেন, আপনারা তদন্ত করে দেখুন এরকম কিছু আছে কিনা।
চাঁদপুর সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, একজনকে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সমাজ কাউকে বা সরকার কাউকে দেয়নি। বর্তমান যুগে এটা এক ধরনের বর্বরতা বলে মনে করি। এটাকে যত দ্রুত নিবারণ করা যায়, ততই মঙ্গল।’
জানা গেছে, গত ঈদের পরে শুক্রবার মসজিদের ইমাম সুদ ও ঘুসের বিরুদ্ধে বয়ান করলে মসজিদ কমিটির লোকজন ক্ষেপে যান এবং ইমামকে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে।
মতলব উত্তর উপজেলায় এক দম্পতিকে সমাজচ্যুত করার ঘটনার রেশ না কাটতেই এমন আরও একটি ঘটনা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ইমামকে বিদায় দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই।