বাবুল হত্যা: পৌর মেয়র আক্কাসের সম্পৃক্ততা তদন্তে স্থানীয় সরকার বিভাগ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম
আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও আক্কাস আলী। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল (৫০) খুনের ঘটনায় পৌর মেয়র আক্কাস আলীর সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা, তার তদন্ত করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে (ডিসি) এ ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত ২২ জুন সংঘর্ষের পর গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলী আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন।’ এ সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকারের পৌর-১ শাখার উপসচিব মো. আব্দুর রহমান এক চিঠিতে ২৭ জুন বিষয়টি তদন্তের জন্য চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে জেলা প্রশাসককে সরেজমিনে তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ চিঠি ইস্যুর আগের দিন ২৬ জুন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মারা যান।পরদিন জানাজায় বাবুলের লাশ সামনে রেখে স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘খুনি আক্কাস (পৌর মেয়র আক্কাস), খুনি মেরাজ (পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম) এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। আর তাদের পেছনে থেকে মদদদাতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটির মেয়র) এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (রাজশাহী-৩ আসনের এমপি)’। শাহরিয়ার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন।
শাহরিয়ারের এ বক্তব্যের পর রাজনীতির মাঠে উত্তাপ দেখা দেয়। খুনের ঘটনা বাদ দিয়ে আলোচনা ঘুরে যায় দলীয় কোন্দলের দিকে। তবে বাবুলের লাশ নিয়ে রাজনীতি চান না নিহতের পরিবার। এসব দলাদলির কারণে বাবুলের প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
নিহত বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বেবী বলেন, ‘লিটন ভাই ও আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব ছিল না। একসময় আমার স্বামী তাদের সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। সবার সঙ্গেই আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিল না। আমরা লাশ নিয়ে রাজনীতি চাই না। প্রকৃত খুনির বিচার চাই।’
নিহত বাবুলের ছেলে আশিক জাবেদ বলেন, ‘লিটন-আসাদ ইস্যুতে এখন আলোচনা ভিন্নদিকে মোড় নিয়েছে। এতে প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারে। আমরা এ বর্বর হত্যার বিচার চাই।’ বাবুলের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১ নম্বর আসামি মেয়র আক্কাস আলী ও ২ নম্বর আসামি ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল তাদের হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে কুপিয়েছেন।
নিহত বাবুলের স্ত্রী জরিনা খাতুন জানান, আহত হওয়ার পরদিন হাসপাতালে বাবুলের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। তখন তিনি হামলাকারীর সম্পর্কে জানতে স্বামীকে প্রশ্ন করেছিলেন। বাবুল তাকে জানিয়েছিলেন, হামলাকারীকে তিনি চেনেন না। তবে চেহারা দেখলে চিনতে পারবেন।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, ‘মেয়র আক্কাস আলী ঘটনার দিন বাবুলকে কুপিয়েছিলেন কি না, তা তদন্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ আমাকে চিঠি দিয়েছে। আমি এটি আমার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আশরাফুল ইসলামকে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছি। তিনি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে তিনি প্রতিবেদন দিলে ঢাকায় পাঠানো হবে।’